বালা শোক] সম্ঞ্ুহ
(তৃতীয় খণ্ড)
সংকলক ঃ প্রতাপ মুখোপাধ্যায়
প্রকাশিকা 2
দেববাণী মুখোপাধ্যায়, এম.এস-সি., বি.টি.
প্রতি প্রকাশন
শি-৫৭, প্রক-ডি-
বাঙহ্গর গ্র্যাভিনিউ, কলিকাতা -৫৫
প্রথম প্রকাশ ৪ জলাইহ, ২০০১
প্রচ্ছদ শিল্পী £ রবীন মণল
গুপ্ুস্রেশ
৩/৭. বেনিয়াটোলা লেন
কলকাতা - ৭০০ ০০৯
উৎসর্শ
সুবিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে
মুখবন্ধ
বাংলা সাহিত্যের হাস্যরসিক 'বীরবল' (ওরফে প্রমথ চৌধুরী, ৭।৮।১৮৬৮-
২।৯।১৯৪১)-এর মতে জীবন হচ্ছে 'জন্ম হইতে মৃত্যু পর্যন্ত ছটফটানি'। পক্ষান্তরে
রবীন্দ্রনাথ তার অসংখ্য গান ও কবিতায় জীবনকে কত মহিমান্বিত (0101) করেই
তা বর্ণনা করেছেন। জার্মান কবি সীলারের (901॥1161-এর মৃত্যুতে মহাকবি গ্যয়টে
(9091016) একটি দীর্ঘ শোককবিতা লিখেছিলেন। অগ্রজকল্প অধ্যাপক ড: শিবদাস
চক্রবর্তী তার “বাংলা সাহিত্যে শোককাব্য এবং" (৯ই জুলাই, ১৯৮৬) গ্রন্থে শোককাব্যের
লক্ষণ নিরূপণার্থে কতকগুলি সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। প্রথমে তার সেই গ্রন্থ থেকে
সেই লক্ষণগুলি পরপর উদ্ধৃত করছি।
“প্রিয়জন বিয়োগজনিত বেদনা থেকে যে শোকের উদ্ভব, কাব্যের বিষয় হিসাবে
সেই শোকেরই অগ্রাধিকার। মরণ জীবনের অনিবার্ধ পরিণতি বলে শোকও নানুষের
অপরিহার্য নিয়তি ।' 'শোকার্তের বেদনা যখন তার স্বকীয় সন্কীর্ণ আধার অতিক্রম
করে ব্যাপ্ত হয়, তখনই তা কাব্যের উপাদান হয়ে ওঠে। '6190' শব্দটির উৎপত্তি
ঘটেছে গ্রীক শব্দ '216995' থেকে-_ যার অর্থ হচ্ছে শোকের কবিতা । এলিজির
ইতিহাস থেকে জানা যায়, শ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর 08149 01610119545" হলেন
শোককাব্যের আদিকবি। (পৃ:১) “ইংরেজী বিশিষ্ট কলাকৃতিরূপে এলিজির আবির্ভাব
ঘটে ষোড়শ শতাব্দীতে । 27001008908 8112112-তে (চতুর্দশ সংস্করণ) স্পেন
[02101112105 (1591)-কে আধুনিক অর্থে প্রথম এলিজি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে তারও অনেক আগে বাইবেলে শোককাব্যের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 9৪1 এবং
)018121-এর জন্য 708৬০-এর বিলাপ শোকের অনাড়ন্বর বাচনিক প্রকাশের
নিদর্শন রূপে ইংরেজী সাহিত্য আদৃত। একটি জনাকীর্ণ নগরীর ধবংসকে উপলক্ষ্য
করে রচিত সমবেত বিলাপ গাথা রূপে বাইবেলের '0901011-81191121101" একটি
অতি বিখ্যাত রচনা। [এই সূত্রে বমান লেখক-সঙ্কলক-এর 'নানাবিধ প্রসঙ্গ' (ডিসেম্র,
১৯৯৭) গ্রচ্থের 'বাংলার দ্বিতীয় শোককাব্য ও কাব্যকার' প্রবন্ধ (পৃ: ৯১-১২০)
উৎসাহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন]।
এলিজির প্রথম লক্ষণ শোকবিহুলতা। সার্থক এলিজি প্রথমেই পাঠকের মনে
বিষাদের ভাব উদ্রিস্ত করে। সর্বাগ্রে মনে পড়ে আইরিশ সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে
এডওয়ার্ড কিং-এর মৃত্যুর পর '95101218169/'-র ঢঙে রচিত মিলটনের “লিসিডাস'।
'কবিবন্ধু ব্লাউ-এর মৃত্যুশোক উপলক্ষ্য করে রচিত। ম্যাথু আর্নল্ডের 11519" বন্ধু
হালাসের মৃত্যুর অব্যবহিত পরে রচিত টেনিসনের ক্ষুদ্রায়ত শোককবিতা '198%
51691, 3169৫, টমাস গ্রের 12190) ৬/11191717 (2017) লেখক -সঙ্কলকের যোজনা
'৪ 00011 01010121 প্রভৃতি কবিতার সাধ্য এমন একটি ব্যক্তিগত বিষাদের
সুর আছে, যা অতি সহজেই পাঠক মনে বিষাদের আবেদন সৃষ্টি করে।” (পৃ: ২)
'এলিজির দ্বিতীয় লক্ষণ ভাবাবেগ এবং প্রকাশভঙ্গির আন্তরিকতা । বিন্দুমাত্র
কষ্টকল্পনা থাকলে শোককাব্যের বেদনাঘন মাধূর্যের হানি ঘটে। পিতার মৃত্যুশোকে
অভিভূত '749 0/ 0191991', প্রিয় কবিবন্ধু কীটসের অকাল প্রয়াণে রচিত শেলীর
/5001015' এবং সাধারণ গ্রামীণ মানুষের কবর দর্শনে রচিত গ্রে-র এলিজির মধ্যে
ভাবাবেগ এবং প্রকাশভঙ্গির আন্তরিকতা পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। এই শোকের কবিতার
মধ্যেই গ্রে যেই অবিস্মরণীয় পংক্তি উপহার দিয়েছেন "11912817195 01 0101/1584
00119 1178 018৬9 |
“এলিজির তৃতীয় লক্ষণ দার্শনিকতা ও মননশীলতা। তবে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন,
দার্শনিকতা ও মননশীলতার মাত্রাধিক্য যেন ব্যক্তিগত সুরটি ব্যহত না করে।'
....17000% 0181391', /0012915' কিংবা "17 18617101211'-এর মধ্যে দার্শনিকতা
এবং মননশীলতার উপাদান আছে, তবে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে নয়'।
'এলিজির চতুর্থ লক্ষণ মন্মায়তা (5010101৬)। কারণ এলিজি গীতিকবিতারই
সগোত্র। ব্যক্তিগত সুরের মাধুর্য না থাকলে এর আকর্ষণীয়তা কমে যায়। তবে
একথাও স্মততব্য যে. সার্থক এলিজির উৎস বিশিষ্ট ব্যক্তিচেতনা হলেও তার
সোহানা বিশ্বচেতনা পর্যন্ত প্রসারিত। নইলে তা সার্বজনীন আবেদন স্মৃতি করতে
পারে না।' (পৃঃ ৩)
“এলিজির শেষ লক্ষণ, কাব্যের শেষভাগে আশাবাদ এবং আত্মসমর্পণের সুরা'
(পৃ: ৪)। এখানে আমার প্রশ্ন, কিসের জন্য আশা তথা আশাবাদের সুর ধবনিত হবে
শোককাব্যে, যেখানে শোক প্রকাশই হোল প্রধান সুর। তাছাড়া আত্মসমর্পণই বা কার
কাছে এবং কিসের কারণে আত্মসমর্পণ £
'গ্রের এলিজির অপরিমেয় জনপ্রিয়তা মেনে নিয়েও জনৈক ইংরেজী সাহিত্যের
ইতিহাসকার মিল্টনের '/01095', শেলীর '/001915' এবং টেনিসনের '|7
1/9110121'-কে ইংরেজী সাহিত্যের তিনখানি শ্রেষ্ঠ শোককাব্য বলে সিদ্ধান্ত প্রকাশ
করেছেন।' “একদিক থেকে দেখতে গেলে সাধারণ করুণ রসের কাব্য -_ যার স্থায়ী
ভাব শোক, সেই ভাবের নিরিখে 'রঘুবংশ' কাব্যের “অজবিলাপ', মদনভস্মের পর
'কুমারসম্ভব' কাব্যে বর্ণিত' প্রভৃতি সংস্কৃত শোকগাথার উৎকৃষ্ট নিদর্শন।” (পৃ: ৪)
অধ্যাপক ড: শিবদাস চক্রবর্তী যখন লেখেন “বাংলা শোককাব্যের জনক বিহারীলাল
চক্রবর্তী... বিহারীলালের 'বন্ধুবিয়োগ' কাব্য (রচনাকাল ১২৬৬, প্রকাশকাল ১২৭৭
বা ১৮৭০) আধুনিক বাংলা সাহিত্র প্রথম শোককাব্য।' (পৃ: ৫) কিন্তু এই সংবাদ
সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃতপক্ষে বাংলা সাহিত্যের প্রথম শোককাব্যের জনক হলেন কবি
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৩৭-১৯০৪)। তার “চিন্তাতরঙ্গিণী' (১৮৬১ সালে প্রকাশিত)
কাব্যটির দ্বিবিধ মূল্য হল এই যে এটি বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যের 'প্রথম'
শোককাব্য মাত্র নয়, এটি হেমচন্দ্রেরও প্রথম প্রকাশিত রচনা । অনুরূপ ঘটনা ইংরেজি
সাহিত্যেও ঘটেছে যেখানে দেখা যায় ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম” শোককাব্য-রূপে
এলিজাবেথীয় যুগের শ্রেষ্ঠ কবি স্পেন্সার (6017010 3091701, 1552-1599) রচিত
"179 91161011610 08191027? (1579) কাব্য ইংরেজী কাব্য সাহিত্যের মধ্যে যেমন
প্রথম শোককাব্য তেমনি এই কাব্যটি স্পেন্সারের প্রথম প্রকাশিত কাব্য। [আমার
'নানাবিধ প্রসঙ্গ', (২৫শে ডিসেম্বর, ১৯৯৭) গবেষণাগ্রন্থের ৮ম প্রবন্ধ “বাংলার
দ্বিতীয় শোককাব্য ও কাব্যকার' (প্রবন্ধটির প্রাথমিক খসড়া “বাংলার দ্বিতীয় শোককাব্য
ও কবি বেদারনাথ দত্ত নামে “বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের শ্রাবণ ১৩৯০ সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল] এটি দেখা যেতে পারে। বাংলার “দ্বিতীয়' শোককাব্য হোল
রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের (৩১।১০।১৮৪৫-১৪।১০।১৮৮৬) 'মিত্রবিলাপ' (১৮৬০)।
বাংলার তৃতীয় শোককাব্য হোল বিহারীলাল চক্রবর্তীর (২১।৫।১৮৩৫-__
২৪।৫।১৮৯৪) 'বন্ধুবিয়োগ' (১৮৭১) ।
আমি আমার সুদীর্ঘ গবেষণাকাব্য নানা বিষয়ের সঙ্গে অসংখ্য বাংলা শোককাব্য
সংগ্রহ করে গেছি। উপস্থিত প্রথম তিনটি খণ্ড প্রকাশিত হোল। ঈশ্বরের ইচ্ছা বাকি
স্তুপীকৃত শোককাব্য সমূহ খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ করবার ইচ্ছা রইলো উপস্থিত অসংখ্য
ব্যক্তি যাদের কাছ থেকে নানা বিষয়ে নানা উপদেশ ও পরামর্শ পেয়েছি তাদের
সকলকে আমার আন্তরিক ভক্তি ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে নিবেদন অংশ শেব করলাম।
তবে এই বই হাতে পেলে যিনি সবচেয়ে বেশি আন্তরিক আনন্দিত হতেন, আমার
সেই "গৃহিনী: সচিব: সখীমিথ: প্রিয়শিষ্যা ললিতে কলাবিধৌ:” পত্রী অধ্যাপিকা
ড: শ্্রীতি মুখোপাধ্যায়, এম্এ. (বাংলা ও সংস্কৃত) কাব্যতীর্থ, পি.এইচডি, প্রয়াতা
হয়েছেন। মহাত্মা বিজয়কৃ্ণ গোস্বামী (২।৮।১৩৪১-১৮৯৯) একদা তার একটি
প্রবন্ধে নাম মনে নেই) তার উচ্চশ্রেণীর নারীদের দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন যাদের
চারিত্রিক গুণানুসারে-_ ১. ব্রন্মবাদিনী, যেমন-গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখা। তার পরের
শ্রেণীর নারীদের তিনি 'বেদপ্রজ্ঞা” বলে নাম দিয়েছিলেন। এমন নারীদের তিনি নামও
দিয়েছিলেন, তবে আমার মনে পড়ছেনা। চারিত্বিক ও মানসিক সর্বদিক দিয়ে আমার
প্রয়াতা পত্রী প্রীতি এই শ্রেণীতে স্থান পাওয়ার যোগ্যা।
১লা আগষ্ট, ১৯৯৭ প্রতাপ মুখোপাধ্যায়
পি-৫৭, ব্লক-ডি, বাঙ্গুর গ্যাভেনিউ
কলকাতা-৫৫
সুচীপত্র
মিত্রবিলাপ কাব্য
বিলা'পমালা
চিন্তা তরঙ্গিনী ও দোহাবলী
সনেট বা এলিজি
নিকর্বাণ প্রদীন্প
অশ্রু
বিয়োগীবন্ধু
অনাথের বিলাপ
পুত্রশোকাতুর পিতার বিলাপ
৩১
৩৩
৮৫
১৯৩
১২৯৯
৯৪৭
ধস্বআজানিভ্লা্পা কানন
শ্রীরাজকৃষ্চ মুখোপাধ্যায়
বিরচিত
বন্ঠ সংস্করণ
(০০৪৮০ 71
711171590০৮ 45061 1401, 592)
11218 717555
23/1,85801700 05172809172928 50991
76101151790 10
52175111 21855 07091005101
148, 932781258172551 9170555 ০0৪91
/২01711 1888
মিত্রবিলাপ কাব্য
গৌতঙবনি)
১
সুধাময় গীত উঠি পবন বাইলে
বরাগিণী জীবন জ্ায়া, সঙ্গে যেন দেহ ছায়া,
ভ্রমিছে গগনে ।
সহচর তাল মান লয়
বিমোহিত করি চিত সুখের স্ষ্পলে।
নু
০কেন স্মৃতি দশখাইছ ০স আপন আব.
কলি আধার ।
প্রস্ফুটিত শ্রায় যবে ফুল
সহসা করাল কাল করিল সংহার।
৯০৯.
এখনও শুনি যেন ০স মধুর আর ।
যেন মে কঠের লীত, পুর্িল ০রে আচম্ঘিভ,
শ্রবণ-কৃহর ।
শ্োোকাবকৃদল মিত্র পড়ি মলে,
এসেছ কি অবনী ভবলে,
সান্তনা করিতে তারে, জীবন দোসর ।
৪
কতদিন দুহঙত্জনে একত্রে বসিয়া,
আমোদে প্রমোদে বত থাকিতাম অবিরত
সঙ্গীত লইয়া,
এপ্রসেছ কি পুন ধরাতলে,
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _ ৩য় খও
শান্তি দিতে বন্ধু চিতে গীত বরষিয়া?
৫
তোমার প্রণয় কথা পড়ে যবে মনে,
ছাড়ি গেছ একেবারে চিত্ত না বলিতে পারে,
পারিবে কেমনে
তোমার যে কোমল হাদয়,
তারে ভুলা সম্ভব কি হয়,
ভুলিতে নারিতে যাবে নিশার স্বপনে?
৬
দিব্য চক্ষে যেন আমি দেখি কতবার,
তোমার আকার।
যেখানে সেখানে আমি যাই,
তোমারে দেখিতে যেন পাই,
বোধ হয় সঙ্গে তুমি থাক আনিবার।
৭.
করাল কৃতান্ত ছিড়ে জীবন-বন্ধন;
প্রাণ আর কলেবর, ভিন্ন করে নিরন্তর,
তপন-নন্দন।
কিন্তু প্রণয়ের সূত্র দিয়া,
বাধা যবে থাকে দুই হিয়া,
পারে না কি কাল তাহা ছিড়িতে কখনঃ
চা
কখন আসিবে বন্ধু সে সুখের দিন,
ছাড়ি দুঃখময় ভবে, তোমায় হেরিব যবে,
পাশে সমাসীনঃ
যে অবধি থাকিব দুজনে,
উপস্থিত সুখে করি অতীত বিলীন?
মিত্রবিলাপ কাব্য
উষাকালে
১
দেখিলাম সখারে স্ষপনে;
মুখে মৃদু মৃদু হাসি, কুমুদে কৌমুদী রাশি,
প্রণয় বচন তার, ঢালে কর্ণে সুধাধার.
শিহরে পলকে কায়া সে কর-স্পর্শনে;
উল্লাসে সহসা নিদ্রা ভাঙ্গিল আমার;
একি উষা, দিলে তুমি আমায় আঁধার?
২
আলোক বসনে
উঠিয়া উদয়াচলে, তুমি উষা রূপবলে,
রত সদা তিমির হরণে।
গিরির গন্ুরে কিম্বা নিবিড় কাননে;
চিরদিন কর তুমি তমো নিবারণ;
ব্রিদ্ধ স্বভাব আজি দেখি কি কারণ;
৯৬৬.
যাহার যা আপন আপন
করি সবে জাগরিত, মায়া বলে আচন্বিত,
প্রতিজনে কর প্রত্যর্পণ ।
পতিব্রতা পায় পতি, সতীব্রত পায় সতী,
যাতে যার থাকে মতি, পায় সকর্বজন।
আমার আপন কেন সহসা হরিলে?
অকলঙ্ক নামে কেন কলঙ্ক করিলে?
৪
হায় উষা পড়ে কিনা মনে;
আসি যবে দ্রুতগতি, উঁকি তুমি দিতে সতী;
ধরা পানে উদয় গগনে;
বহুদিন গত নয়, দেখিতে যুবকদ্বয়ঃ
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -_ ৩য় খণ্ড
সুমন্দ সমীর েবি নিযুক্ত ভ্রমণে;
আনন হইতে যেন ঝরে নিরন্তর ।
৫
আজি হের এক জনে আর.
কোথা গেছে প্রফুল্পতা, অন্ধকারে বিদ্যুল্লতা;
সে আননে ঘটেছে বিকার, -_
যেন এক বৃত্তাস্থিত, দিন শেষে শুহ্কচিত,
একটি কুসুম মাত্র বিহনে সখারঃ
কেন রে বিকট কাল না নিল আমারে?
থাকিব না হেরি মিত্রে কেমনে সংসারে?
৬০]
উভয়ের এক মন ছিল,
ভিন্ন মাত্র কলেবর. যথা একদিন কর,
শোভা করে বিভিন্ন সলিল;
মুহূর্তেক না হেরিয়া, বিকল হইত হিয়া,
নয়ন আড়ালে কেহ নহে এক তিল:
এখনো চুম্বক চিত্র ধাইছে আমার;
সে মেরুর পালে, সদা বেগে অনিবার।
৭
দুই পথে বন্ধুর মিলন,
নিদ্রায় মগন যবে, ক্পনে দর্শন তবে,
মৃত্যুসনে অথবা গমন;
সদা ইচ্ছা নিদ্রা নাই, বন্ধুরে দেখিতে পাই,
মহানিদ্রা হোক নিদ্রা শয়নে বাসনা,
কেন জাগাইয়া উবা বাড়াও যন্ত্রণা?
০
প্রিয়চন্দ্র গেছে অস্তাচলে,
শোকে প্রাণ-কুমুদিনী, কেন না হবে মলিনী,
মিত্রবিলাপ কাব্য
না ভাসিবে নয়নের জলে?
সদা মন চাহে যারে লুকায় সে অস্ধকারে,
কে তারে আনিতে পারে, বলে কি কৌশলে?
বন্ধুরে ঘেরিয়া আছে যে ঘোর আঁধার,
সেখানে নাহিক উষা তব অধিকার ।
মধ্যাহ্ন সময়ে
১
ওই যে গগন মাঝে বসি দিনকর;
আগুনের কণা, অথবা যন্ত্রণা,
বর্ষে হেন নিরন্তর;
মাটি ফাটে দাপে, প্রচণ্ড প্রতাপেঃ
নেত্র ভবে কাপে, কিরণ-বাণে।
পথিক সকলে, জলি অসপাননে
গিয়া তরুতলে, বাচিছে শ্রাণে।
২
কিন্তু কতক্ষণ রবি এইভাব রবে?
দুঃখে ক্ষীণ করে, তিমির সাগরে,
ডুবিতে সত্বরে হবে;
প্রতাপ লুকাবে, কোথা চলি যাবে,
খুঁজিয়া না পাবে, কেহ তোমারে;
আঁধার হইতে, আসি অবনীতে,
হইবে যাইতে, পুনঃ আঁধারে ।
৯১৬.
আমাদেরো এ সংসারে এইরূপ গতি,
পুনশ্চ তিমিরে গতি;
ভূত ভবিষ্যত, অন্ধকার বৎঃ
সংসারে যাবৎ, উন্কা সমান:
কোথা হতে আসি, বর্তমানে ভাসি,
পশ্শি তমোরাশি, কোথা প্রস্থান ।
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _ ৩য় খণ্ড
৪
আকালে তোমারে. ডুবাতে না পারে,
প্রিয়বন্ধ হায়, মধ্যাহে তোমায়;
স্াঙ্যালা গুন, ভাঙ্গিল ভাল ।
৫৫
প্ন্নাজ দেখা তুমি দিবে দিবাশনতিং
সনির দিয়া, পৃকর্বদিকে গিযা,
উস বিচিত্র গতি।
ভবনদী ীরে. কিন্তু কেবা ফিরে,
শমন মন্দিরে, গেছে যে জন?
কুতান্ত দুরন্ত, কেবা বননন্ত
৬৬
অরে রে বিকট কাল এ কি তোর রীতি?
সেই দীপ জ্বলে, নিশ্বাসের বলে;
নিবাইতে তোর শ্রীতি।
যে নিশা রতনে. চাহে সবর্বজনে,
মেঘ আবরণে, চাকিস্ তারে;
যে তরু আশ্রয়, করে জীবচর
তাতে কেন হয়, তোর হিংসা রে?
৭
এই যে সম্মুখে কুঞ্জ শোভে মনোহর,
তপনের তাপে, তনু যবে তাপে,
মন-কথা কয়ে. কাটাই কাল;
মিত্রবিলাপ কাব্য
সে দিন কি আর, ফিরিবে আমার,
ছিড়িব হিয়ার যন্্পা জাল?
০
অসহায় একেশ্বর সংসার সাগরে
ভাসি নিরন্তর, তরী
ডুব্ ডুব যেন করে,
বিপদ পবন, বহে ঘন ঘন,
ব্যাকুলিত মন, নিয়ত করি;
মিত্র গেছে আর, ০কে আছে ্
রিবে উদ্ধার, সঙ্কটে ধরি!
সন্ধ্যাকাালে
দিবা অবসান,
বিরহ-সন্তাপে, পক্ষজ হযে কাপে,
সরসী-জলেঃ
অন্তরে আগুন দ্বিগুণ জ্ুলে।
২
মন সুখ দিন,
বন্ধুসনে অস্তাচলে হয়েছে বিলীন:
বিরহানল;
১৪/-887089,
টিটি রর বা রা
১১.
এই ন্ধ্যাকাল,
এখন নয়নে যাবে দেখি যেন কাল,
উল্লাস যে কত, দিত অবিরত,
১০ বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ __ ৩য় খণ্ড
যবে দুজনে,
ভ্রমিতাম হেরি প্রফুল্ল মনে।
৪
যেমন গগনে
পশ্চিম সাগরগামী তপন-কিরণে,
যেন মায়ায়
নানা সাজ পরে, নানা রূপ ধরে,
মুহুর্তে মুরতি বদলি যায়;
৫
সেই রূপ কত
দুজনের মনে. যবে মিত্রসনে
আমোদে ধীরে,
যাইতাম দোহে, গ্রাম বাহিরে।
৬০
কোথা লুকাইল
সে সকল মূর্তি আশা? হায়! কি হইল?
মরীচিকাবৎ, গিয়াছে তাবৎ,
কালের করে;
নিশার সপন, জাগিয়া এখন
একি দেখি সব প্রাণ বিদরে।
চা
থাকিবে কেমনে
নানাবিধ রূপে সাজে জলদ গগনে?
মিত্রবিলাপ কাব্য ৯৯
মিত্র পত্ী দর্শনে
১
যথা শশীকলা কালের কৌশলে;
বিনা ঝতুপতি. যথা বসুমতী,
কিংবা ছিন্নবৃন্ত কুসুম যেমতিঃ
অথবা মলিন দিবা যেমন
কুজঝটিকা জালে ঘেরে যখন,
কিম্বা মেঘ পালে, আক্রমে যে কালে,
দিনরতন!
সি
দেখিলাম আজি বন্ধর বণিতা,
বিষময় শোকে ব্যাকুলা ললিতা ।
উঠিতে বসিতে অঙ্গে নাহি বল।
কি দুরন্ত কীট মাঝে পশিয়া
কুসুম সুষমা নিল হরিয়া,
সৌন্দর্য্য কোথায়, দেখি দুঃখে হায়,
বিদরে হিয়া।
এ
সুধাংশু বিহনে যেমন যামিনী
তমোবাসে তনু চালি বিরহিনী
নীহারাশ্র জল; বর্ষে অনর্গল;
দীর্ঘশ্বাস মাঝে ছাড়িয়া কেবল;
মিত্রপত্বী, দশা সেরূপ তবঃ
অন্ধকার তুমি দেখিছ ভবঃ
বিরহ বিকারে, আছ এ সংসারে
জীবন্তে শব।
৪
না ফুটিতে ফুল, না বধিতে ফল,
ললিতা লতিকা লুটাও ভূতল ।
১৯
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
প্রণয় বন্ধনে, যে তরু রতনে,
কাল ঝড় কোথা হতে আসিয়া
ফেনিল ত্বরা সে তরু তুলিয়া;
সে সৌন্দর্য নাই, রয়েছে সদাই
মাটি মাখিয়া।
ঠে
কেন অশ্রু জলে ভাসিছ নলিনী?
যে রবিরে ভাবি যাপিছ যামিনী,
বিকট -কালের অস্তাচলাগারে।
সে তিমির ভেদি কি সাধ্য তার
দর্শন তোমার দিতে আবার ।
কেবল হৃদয়ে, সে রবি উদয়ে
এখন আর।
কেন বৃথা আর কাদ ব্রজবালা
সহিতে না পারি বিরহের জ্বালা £
যে ত্রুর অব্রুর, নির্দয় কবর্বুর;
লয়ে শ্যাম ধনে গেছে মধুপুর;
আনিয়া সে ধনে দিবে আবার ।
না পারে করিতে, ভ্রন্দন সে চিতে,
দয়া সম্ার।
৭
এই নাকি ০সেই সুখের শ্রতিমা ?
এই ল্লানমুখী সে চারু পূর্ণিমা,
রঞ্জিত নিয়ত নিকট নিবাসী;
যাহার আনন সুধার ধারে
মিত্রবিলাশপ কাব্য শি
সাজিত সংসার আনন্দ হারে;
সখী আকারে ।
ঢ
অরে কাল তোর নাহি কিছু মায়াঃ
সম্তাপহারিণী ছিল সেই ছায়া,
একি ব্যবহার, ওরে দুরাচার!
সুশীতিল মনে যন্ত্রণানল?
কেমন ক্ষভাব তোর রে খল,
সুধা ছিল যথা, চালি কেন তথা,
দিলি গরল?
৪৯
কেন বন্ধু তুমি হইলে এমন
যে ছিল তোমার হৃদয়রতন
অনায়াসে তারে, অকৃল পাথারে,
ফেলি চলি শেষে গেলে কোথাকারে?
প্রেমের পুতলি ভাসিছে জলে
ডোবে ডোবে শোক সাগর তলে;
বিরহ বলে।
১৩০
পলকে প্রলয় যাহার বিহনে
দেখিতে সতত জাগি কি স্ষপনে;
হেলায় তাহারে, ভুলি একেবারে.
একা রাখি গেলে মর্ত্য কারাগারে
কে করে এখন সান্ত্বনা তায় £
নয়নের জলে, বদন মণ্ডলে,
স্বোত বহার ।
১৪
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _ ৩য় খণ্ড
চন্দ্রালোকে
৯
ল্লানা সন্ধ্যা পতিপাশে করিল প্রস্থান?
পৃকর্বাশার দ্বারে চন্দ্রে করিল আহ্বান;
প্রিয়ার বদন হেরি করে সুধা দান;
আনন্দে যামিনী হাসে, সুখে দশদিশ ভাসে,
তরাসে তিমির কোথা করে অন্তর্ধান।
২
চকোরী সুধার লাগি উড়িল আকাশে;
সরোবরে কুমুদিনী, দিবাভাগে বিরহিণী,
পতির মিলনে ধনী হিয়া খুলি হাসে।
হেরিয়া তনয়াগণ; বারিধি প্রফুল্ল মন;
উথলে হাদয় বারি যেতে পুত্র পাশে।
প্রিয় সখী আগমনে, ফুঁটিল নিকৃঞ্জ বনে,
সুগন্ধা রজনী-গন্ধা দিক্ পৃরি বাসে।
৩)
সমসূত্রে বদ্ধ সবে সবর্ত্র সংসারে;
প্রণয়ের পাত্র বিনা, মন ছিন্গতার বীণা;
বিরাগ বাজায় মাত্র ভবের বাজারে।
যার যে আপন আছে; যায় সেই তার কাছে,
একাকী বান্ধবহীন থাকিতে কে পারে?
তমোময় ধরাতলে, কেবল প্রণয় জলে,
নাশিতে আলোকবলে দুখের আধারে।
৪
প্রণয়ের পাত্র সনে হইলে মিলন;
উতলে আল্লাদ চিতে, সুধা বর্ষে চারি ভিতে,
বিজলির সম হাসি উজলে আনন;
মানস সরস মাঝেঃ আশা কমলিনী সাজে;
মিত্রবিলাপ কাব্য ঠ্
হেরিয়া নয়নে পুনঃ সুখের তপন;
রোগ শোক দূরে যায়, ইচ্ছা হয় পুনরায়
সংসার তরঙ্গ রঙ্গে চালাই জীবন।
৫
প্রণয় বিষয় আজি বুঝি আমি ভালো;
বন্ধু সনে যে সকল, দেখিতাম নিরমল,
আজি সে সকল আমি দেখি যেন কালো
সে কালে শীতল কর দিতে তুমি সুধাকর,
তুমিও এখন মম মনাগুণ জ্বালো,
তোমারো মলয়ানিল, শীতলতা গুণ ছিল,
এখন কেবল তৃমি শোক শিখা পালো।
৬
সে কাল,-_ আর কি মন পাইব ০স কালগ-
চন্দ্র করে বন্ধু সনে; সুমধুর আলাপনে;
কোথায় থাকিত পরি সংসার জঞ্জাল;
চকোর কি সুখী তত; সুধা পানে যবে রত,
যত সুখ দিত মিত্রবচন রসাল।
নিশা কি নিম্মলা তত. হলে চন্দ্র সমাগত,
সে কালে নিম্মল যত হৈত মম ভাল?
, ৭
রে কাল, সে কাল কেন হরিলি নিদয়ঃ
শিশির মুকৃতা মালা সাজায় যে স্থল ভালা,
করিস সে স্থল শোভা তাপ-বলে লয়।
এ সংসার অন্ধকার, করিস রে দুরাচার,
রাহুরূপে গ্রাস করি শশী সুখময়।
তোর অত্যাচারে খল, ছিন্নভিন্ন ভূমওল,
ধরা দিলি রসাতল, তপন তনয়।
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _- ৩য় খণ্ড
বৃ্টিকালে
১
কাল মেঘে আবরিছে গগন-বদন;
দীর্ঘশ্বাস বহে ঘন ঘন;
থেকে থেকে আত্নাদ, একি ঘোর পরমাদ,
অনল নিকলে বক্ষ ফাটি ক্ষণ ক্ষণ।
কি শোকে আকাশ কাদে, বিনাইয়া নানা ছাদে?
কাদিছে কি হারাইয়া দিবসরতন?
৯২
গ্রাসিয়াছে কাল; তমোময় ব্যাল,
শোক তাপে বিদরে অন্তর;
নয়নে নীরের ধারা বহে নিরন্তর:
মম অশ্রু বিসঙ্ন, হবে নাকি নিবারণ;
আকাশ তোমার যথা হইবে সত্বরঃ
ও)
এখনি গগন তব মলিনতা যাবে;
হৃদয়ের ধন, সুন্দর তপন,
হৃদিমাঝে অবিলম্বে পাবে;
আলোক ভূষণ অঙ্গে, এখনি পরিবে রঙ্গে,
হেরিতে তোমার মূর্তি কত লোক চাবে;
শত্রধনু দিয়া তব শরীর সাজাবে।
৪
আমার মুখের মেঘ কিন্তু কে হরিবে?
মম চিত্ত রবি, সুখময় ছবি;
কে আর আনিয়ে পুনঃ দিবে?
প্রফুল্পতা অলক্কারে, কে সাজাবে অভাগারে;
মিত্রবিলাপ কাব্য ১৭
হৃদয়ের অন্ধকার কে দর করিবে?
আরে ফণী মণিহারা, ০কিদে কেদে হবে সারা:
কে আর তিমিরে ১৩ আলোক ধরিবেছ%
সংসার "৮৬" কান, তুই দাবানল,
প্রযুল্লিত ফুল. সোরভে অতুল.
কুসুমালক্কার পরা, লতিকা হরিতাশ্রনা,
যৌবন বীরত্ব শে।ডাময় তুল
কলিকা বিকাশোনুখ, মুকুল লেচন সুখ,
ভস্মরাশি দুষ্টকাল কারিস সকল ।
হে আকাশ কেন নাহি কাদ নিরম্তর€
তোমার নয়নে, পড়ে প্রতিক্ষণ,
ভব দুঃখ রাশি ভয়ঙ্কর
কিন্ধা বুঝি দিবালোকে, স্পন্গ দেখি অতিশে।বে
করিত না পারে বারি শ্রায় চক্ষে ভরঃ
কিন্তু নিশা আগমনে, কাদ বসি সংগেোপনে,
সে অশ্রু শিশির বলি ভাবে ভ্রান্ত পর!
৭
যবে দিবা হয় বড় বুঝি সে সময়ং
উথলিয়া মন, কখন কখন,
লোচনে সলিল স্রোত বয়।
গাল দেবতার কথা, কাহাল না লাগে বাথা,
দো এই সংসারের যন্ত্রণা নিশ্চয়?
হেরিয়া দুঃখেব ভার, কাল ছাড়। জর কার,
সমবেদনা নানি াবশরে জদয়।
কুসুমোদ্যানে
৬
হাসিছে উদয়াচলে উষা বিনোদিনী,
গোলাপি বসন পরা, বূপে জনমনোহরা,
৯১৮
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _- ৩য় খণ্ড
চেতনা করিয়া সঙ্গে মধুর ভাষিলী,
ফুল কুল প্রফুল্ল আননে
পুলকাশ্র পরিত লোচনে
করে তব অভ্যর্থনা, তপন নন্দিনী।
স্
শরত, হিমন্তে দ্বন্ধ যে কাল লইয়া
সে কালে যখন বঙ্গে, শারদা আসেন রঙ্গে
যেমন সকল লোকে পুলকিত হিয়া,
মনোমত অলঙ্কার পরে
পরিচ্ছন্ন নব বস্ত্র বাছিয়া বাছিয়া;
৩
সে রূপ তোমার, উষা করিছে আহ্বান
ফুল কুল নববেশে, ওই দেখ হেসে হেসে;
জড়াইয়া ক্ষণকাল তাপিতোরো প্রাণঃ
যুতী জাতি মল্লিকা মালতী
গন্ধরাজ গন্ধের বসতি-_
করেছে সুন্দর শ্বেত বস্ত্র পরিধান।
৪
লোহিত-বসনা জবা, করবী রঙ্গিনী;
সুবর্ণে ভূষিতা চাপা, যার রূপগুণ চাপা;
নাহি থাকে পোহাইলে আঁধার যামিনী;
অন্যান্য কুসুম সখীসলেঃ
প্রফুল্লিতা তব সম্ভাবণে
মুকৃতার হার গলে, তিমিরহারিণী।
৫
প্রকৃতি পৃবের্বর মত একভাবে আছে।
শীতল সমীর বহে, ফুল ধরে গাছে।
মিত্র বিনা কেবল আমার
মিত্রবিলাপ কাব্য ১৯
ভাল কিছু নাহি লাগে আর,
সব বিবময় বোধ হয় মম কাছে।
২৬
সে সময় কেন স্মৃতি দেখাও আবার,
যে সময়ে বন্ধুসনে; যেতাম সহর্ষ মনে
তুলিতে কৃসুমচয় -__ উদ্যানের সার--
ইস্ট দেবতার পূজা তরে
ভক্তি শ্রদ্ধা সরলতা ভরে£
তেমন বিমল সুখ পাইব কি আর?
৭
না ডুবিতে সুখতারা, পাখী না ডাকিতে,
না দিতে আলোক রেখা, প্রকর্দিক ভালে দেখা,
ত্যজিয়া নিদ্রার ঘোর লোক না জাগিতে
পুষ্প জন্য যেতাম দুজনে
এই শঙ্কা করি মনে মনে
পাছে অন্যে যায় আগে কুসুম তুলিতে।
৮
সে আশঙ্কা, সে বাসনা, সে বন্ধু কোথায় £
কালস্োতে ০ সকল, ভাসি গেছে কোন স্থল,
বিলো'পী কালের খেলা বুঝা নাহি যায়।
এই ফুল কুল থে এখন
করিতেছে লোচন রঞ্জন,
কতক্ষণ রবে সাজি [ীন্দর্যয মালায় ।
কুমারনদ তীরে
৯
শুকায়েছে শরীর তোমার;
কোথা তব বরিষার প্রতাপ কুমার?
জ্বরেছ কি কাল জরে, শীত মাত্র গেছে সরে,
দহিতেছে কলেবর দাহ অনিবার£
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
মিশিতে সাগর সনে পাইতে নিস্তার?
২
সংসারের যন্ত্রণা জ্বালায়,
জীর্ণ শীর্ণ কলেবর কার না ধরায়ঃ
কার হিয়া নাহি জ্বলে; অহরহঃ দুখখানলে?
কাহার বা চিরদিন বল দেখা যায়?
অরে রে অবোধ মন; নহে দুখ নিবারণ,
অনন্তকালের জলে না মিশিলে, হায়।
১৬]
কতদিন _-- আছে কি স্মরণে?
কৃমার তোমার কলে আনন্দিত মনে
ভ্রমিতাম এ সময়, বাক্য ব্যয়ে বহ্ধৃদ্ধয়,
যেই রবি তাপময় ডুবিত গগনে ।
ধরিত না হাসি আর উভয় আননে।
৪
যখন সরস ছিল এ পোড়া হৃদয়,
কত খেলা তব জলে হয়েছে উদয়;
তোমার তরঙ্গ সঙ্গে, কত খেলিয়াছি বঙ্গে;
সাঁতারে অস্থির করি তোমার আলয়।
৫4
নাহি আর সে ভাব আমার;
বন্ধুর বিহনে সদা করি হাহাকার;
চিতে শোক মেঘ পশি, গ্রাসিয়াছি সুখশশীঃ
দশদিক দেখি মসী সমান আঁধার।
হেরিলে তোমার নীরে; ভ্রমিলে তোমার তীরে,
দ্বিগুণ আগুন মলে জলে আনিবার।
মিত্রবিলাপ কাব্য ২৯
১৬
আসি তবে কি জন্য এখানে?
ভালবাসি তবে কেন ভ্রমিছে এ স্থানে?
বন্ধু সনে তব কূলে, ভ্রমিতাম দুখ ভুলে.
মিত্রে দেখি চাই হেথা যে দিকের পানে।
যেন সে স্ব্গীয় মূর্তি, কিবা আননের স্ফর্তি,
দূর হতে দেখি কভু তব বিদ্যমান।
৭.
শোভিতেছে সম্মুখে শ্মশান:
নরমুণ্ডমালা গলে, বিকট বয়ান;
ভস্মরাশি মাথা অঙ্গেঃ শুনেছি তোমার সঙ্গে,
রাত্রিকালে প্রেতদল করে অবস্থান,
দেখাও যদ্যনপি পার; প্রেতরূপ কি প্রকার,
দেখিব কিরূপে থাকে দেহহীন শ্রাণ।
তর
একদিন ভ্রমিতে ভ্রমিতে
কালবলে আগে যদি, পার হও ভব নদী;
খুলি হাদয়ের দ্বার, ০ দেশের সমাচার:
বন্ধুর নিকটে দিবে প্রফুল্লিত চিতে।
৪৯
সে আশার করিলে নিরাশ ।
অঙ্গীকার হইল তব কেবল বাতাস।
যদি এ শ্ুশান ভুমি. ভ্রমণ করহ তুমি,
নিকটে আসিয়া সব কর না প্রকাশঠ
কখন পেলাকারে দেখি তোমা যে প্রকারে,
কভু হয়. কভু মনে না হয় বিশ্বাস।
৯১০
এ সকল অমূল কল্সনা।
বন্ধু কভু নাহি জানে করিতে ছলনা.
২২
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ __ ৩য় খণ্ড
যদ্যপি থাকিত পথ, পরিবারে মনোরথ,
বন্ধু কভু মম শান্তি দিতে ভুলিত না।
একেবারে দূর হেত অনেক যাতনা ।
সহকার মূলে
১
কি বলিছ মৃদু স্বনে ওহে সহকারঠ
দুঃখ ঢাকি কি হইবে? বল প্রকাশিয়া
মাধবীরে হারাইয়া যদি কাদে হিয়া,
কি কারণ লুকাইছ নিকটে আমার£
আমার সে দশা আজি যে দশা তোমার।
২
হারাইয়া প্রেমমূর্তি বান্ধব রতনে,
দেখিতেছি শূন্যময় হৃদয়ভাগ্ডার,
তমোময় বিষময় হয়েছে সংসার;
আপনার দশা দেখি বুঝিতেছি মনে
কি দশা তোমার তরু মাধবী বিহনে।
৩)
মিছা কেন জর জলি অন্তর অনলে;
জান না মনের কথা করিলে প্রকাশ,
লোকে বলে, হয়ে থাকে যন্ত্রণার হাস;
আসিয়াছি তাই তরু আজি তব তলে
দুজনে মনের কথা কহিব বিরলে ।
৪
ভেবনা এসেছি আমি করিতে ছলনা ।
সে প্রণয়মণি মূর্তি, যাহার প্রকাশে
আসিতে কখন নাহি পারিত যাতনা,
যার সহী প্রফুল্লপতা কমল বদনা;
মিত্রবিলাপ কাব্য ২৩
৫
যার সহ কতদিন আসি তব তলে
তপনের তাপে তপ্ত তনু জুড়াইয়া,
আমোদ তরঙ্গ রঙ্গে অতি কুতৃহলে
মজিয়া গিয়াছি তব মধুময় ফলে;
৩
কুড়াতে গিয়াছি তব মূলে ফলচয়;
আমোদে প্রমত্ত অতি নির্ভয় হৃদয়।
৭
এতক্ষণ সাধিলাম কথা না কহিলে?
আমি দেখি একেবারে হয়েছি পাগল;
কোন্ কালে কথা কয়ে থাকে তরল?
সন্ সন্ তরুশাখা করিছে অনিলে;
ডুবেছে আমার বৃদ্ধি বিস্মৃতি-সলিলে।
৮
কার কাছে মনোদুখ বলিব আমার;
কে পারে যন্ত্রণানল করিতে নিবর্বাণ?
শীতল করিতে শোক-সন্তাপিত প্রাণ?
নামাইতে কলে বলে হদয়ের ভার
করিতে নিরাশ মনে আশার সঞ্চার
৪৯
যখন যেখানে যাই দুখ দেখি তথা,
সবর্বব্র শুনিতে সদা পাই দুঃখ কথাঃ
সাম্ভ্না কে করে আর? বাড়ে মনোব্যথা |
৪
লাণ্লা শোককাব্য সংগ্রহ _- ৩য় খণ্ড
স্২০১
খ। নিভিরা এখে্বোরে জীবন গ্রদীন্স।
করিস্ ৩ বারন্বার আলোকে আঁধার;
ন্মিনভ শহবে হিচা করি টিপ টিপঃ
লিজ "*মির মাঝে -ছবি ভবদ্বীপপ।
মিত্র ভা '+.-* দর্শনে
১
কে মলিন পাহালনা ৮ য়া তলে,
৩০, ভিক্ষপহশ শান্ত ভুমে অচেতন্ন
হৃদঘ শশা কাল করিলে হরণ?
কে ডবিহছে ওই শেকি-সাগরের জলে
"সুমন কমল-লতা সরসী কমলে
যখন কমল কেহ তুলি লয় বলে£
২
এই দীনা হীনা নাকি বন্ধুর জননী?
গ্রাসিয়াছে তব রবি কালরূপ ফণী।
আসিয়াছে ভয়ন্কর শোকের রজনী ।
৩১
কেদ না কেদ না মাগো সন্বর রোদন ।
অশ্রু জলে বাড়িবে কি সে তরু আবার.
কালের কুঠারে মূল কাটিয়াছে মার?
দিন দিন করি ক্ষীণ আপন জীবন
চারে কি জীবন দিতে করেছ মনন?
দীদশ্বিাসে শ্বাস তালে দিবে কি কখন?
মিত্রবিলাপ কাব্য ২৫
৪
পাশ্থশালা এ সংসার, কেহ নহে কার।
একদল আসে আর একদল যায়ঃ
আজি যাব সঙ্গে দেখা কালি মে কোথায়?
ইহাকে উহাকে বলি আমার আমার
মিছা বৃদ্ধি করে লোকে জীবনের ভার।
মায়ার বিকারে ঘটে এরূপ বিচার ।
৫
বিচিত্র রঙ্গের কাচ খণ্ডের সমান
বিবিধ বরণে মায়া সাজায় সকলিঃ
কুৎসিত যা চলি যায় মনোহর বলি।
মায়া সহচরী আশা হরি সত্যজ্ঞান।
চৌদিকে অপ্রকর্ব পুরী করয়ে নিন্মাণ;
পলকে তাহার আর না থাকে সন্ধান।
৬
মনের পিপাসা নাহি মিটে ধরাতলে।
মরীচিকা কুজ্ঝটিকা পারে কি কখন
শীতল সলিলতৃষা করিতে হরণ?
না কবিলে স্নান মুক্তি সরোবরে জলে,
না যায় মনের তৃষা, দুখে দেহ জুলে।
৭
মৃতুর্ত সুখদ সনে দর্শন এখানে ।
বিজলি ক্ষণেক খেলি জলদে লুকায়;
কুসুম সুষমা আর রহে না বাগানে ।
1০৫
কেন মা দ্বিগুণ তব বাড়িল রোদন?
(মগধের অন্তর্গত কপিলাবস্তু নগরে রাজবংশে বৌদ্ধদেব জন্মগ্রহণ করেন।
নামকরণ সময় তাহার নাম সিদ্ধার্থ রাখা হয়। রূপবতী গুণবততী যশোধরার সহিত
তাহার বিবাহ হইয়াছিল। বার্ধক্য মরণ ও রোগ দেখিয়া সংসারের প্রতি তাহার
বিরাগ জন্মে। ইতিমধ্যে একজন জিতেন্দ্িয় সুখদুঃখ-বোধশূন্য সন্গ্যাসী দেখিয়া
সংসার পরিত্যাগ করিতে কতৃসংকল্প হইলেন। যখন যশোধরা নিদ্রিতা ছিলেন,
তিনি সেই সময়ে আবাসগৃহ হইতে বহির্গত হন)।
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ __ ৩য় খণ্ড
ভাসিতেছি আমিও মা নয়নের জলে;__
মা তুমি কেদনা আর -__ মৃদু মা নয়ন__
কাদিয়া কি হবে? কর শোক সম্বরণ-__
আমি আর উপদেশ কি দিব এখন?
৯
কেদ না কেদ না মাগো কেদ না গো আর।
অনুক্ষণ মা বলিয়া ডাকিব তোমায়,
ভিন্ন তুমি না ভাবিতে সখায় আমায়।
ভাব গো মা এক পুত্র গিয়াছে তোমার
অন্য পুত্র হতে ত্রুটি হবে না সেবার।
কেদ না কেদ না মাগো কেদ না গো আর।
ইতি মিত্রবিলাপ কাব্য সমাণ্ড।
অন্যান্য কবিতাবলী
বৌদ্ধদেবের সংসারত্যাগ
(১)
প্রণয় বন্ধন ছিড়া কঠিন কেমন;
যাই যাই আর যেন না চলে চরণ;
ইচ্ছা করে একবার, ফিরে দেখি মুখ তার,
যার সনে একতাল মজেছিল মন;
মম সুখে যার সুখ, মম সুখে যার সুখ,
মম হাসে যার হাসি, রোদনে রোদন।
মিত্রবিলাপ কাব্য ২৭.
জীবন-নয়ন-মণি পুর্বে কোলে করি;
হাসি লয়ে প্রফুল্পতা, কিংবা যেন ক্বর্ণলতা,
সুবর্ণ কুসুম রত্র হৃদি মাঝে ধরি;
এ সুধায় যেন নাহি মন লবে হরি?
৩
প্রেয়সীর বূপ দেখি হইয়া কাতর
ক্ষমীণকর হইয়াছে প্রদীপ নিকর।
আকাশে প্রকাশে যবে পর্ণ সুধাকরঃ
অন্ত পাখী কে প্রয়াসী, যখন ময়ূর আসি
চন্দ্রক কলাপে করে আকৃষ্ট অন্তর£
৪
ফুলে ফুলে প্রাণ প্রিয়া হয়েছে সভ্জিত।
চস্পক দিয়াছে বর্ণ করিয়া মাজ্ঞিত;
কপোলে চরণে করে, কমল বসতি করে;
ওষ্ভাধারে বন্ধজীব হয়েছে শোভিত;
কদন্ধ বসেছে বক্ষে নীলোৎপল দুই চক্ষে;
নাসিকায় তিলফুল, দন্ডতে কুন্দ স্থিত।
৫
কোমলা কুসুম-সম ললিতা ললনা;
নাহি জানে কোন কালে সল্সেও ছলনা;
জীবন কাটায় করি পতি উপাসনা;
নিয়ত আলঙ্লান লয়ে পুরাই বাসনা ।
৯৬০
একবার কুসমের নিলাম আক্ান;
অমনি অমিয়ময় হৈল মন প্রাণ;
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
কেমনে মানস অলি, এমন কুসুমাবলী,
সহসা ত্যজিয়া দূরে করিবে প্রস্থান?
তাহে প্রেমসূত্র দিয়া, বাধা আছে দুই হিয়া,
চলিয়া যাইতে যেন পিছে লাগে টান।
৭
এই যে প্রিয়ার কোলে নিদ্রিত কুমার,
কিবা সুকোমল ভাষে, কেমন মধুর হাসে,
সুশীতল করে সদা হৃদয় আমার;
কেমনে এমন ধন, একেবারে বিসর্জন,
করিয়া যাইবে মন ত্জিয়া সংসার।
৩
কেমন মোহিনী শক্তি তোমার গো মায়া,
জানি আমি কতক্ষণ সুখে থাকে কায়া;
জানি আমি এ জীবন ক্ষণস্থায়ী ছায়া;
তথাপি অবোধ মন, নাহি পারে কি কারণ,
অনায়াসে ত্জি যেতে প্রিয় পুত্র জায়া।
6৯
নববিকশিত পুষ্প সমান বদন;
সুস্থ কলেবরে এবে শোভিছে নন্দন।
কিন্তু কতক্ষণ রবে, এভাবে দুখের ভবে,
কে জানে আসিয়া রোগে ধরিবে কখন?
কোথা এ প্রফুল্ল ভাব, হবে তবে তিরোভাব,
কুসুম সুষমা কীটে করিবে হরণ ।
সম্পর্ণ।
কৰি পরিচিতি
রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ঃ নদীয়া জেলার গোস্বামী দুর্গাপুর নামক গ্রামে আনন্দচন্দর
মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় তথা কনিষ্ঠ পুত্র জন্গ্রহণ করেন। মাত্র নয় বৎসর বয়সে
তিনি পিতৃহীন হন। তার ছাত্রজীবন কৃতিত্বে সমুজ্ভ্বল। এফএ থেকে এম এ
বিএল পর্যন্ত তিনি অতি উত্তম স্থান নিয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৮৬৮ সালে তিনি বিবাহ
করেন। ১৮৬৭ সালে এমএ পরীক্ষার পর কিছুদিন জেনারেল এসেমরিজ
ইনস্টটিউশন-এ অধ্যাপনা । ১৮৬৮ সালে বিএল পাশ করে বহরমপুরে ওকালতি
করতে যান। ১৮৬৯ সালে কটন আইন কলেজে অধ্যাপনা। পরে বহরমপুরে
আইনের অধ্যাপনা । ১৮৭১ সালে ৩০০ টাকা বেতনের পাটনা কলেজে দর্শন
শাস্ত্রের অধ্যাপনা কাজে যোগদান করেন। ১৮৭২ সালে কলকাতায় হাইকোটে
ওকালতি শুরু করেন। ১৮৭২-৭৩ সালে পুনরায় কলেজে অধ্যাপনা । ১৮৭৭.
৭৮ সালে সম্ভবত বেঙ্গলী পত্রিকা সম্পাদনা । ১৮৭৫ থেকে ১৮৭৮ পর্যন্ত
পাইকপাড়া রাজবাড়িতে গৃহশিক্ষকতা। ১৯৭৮ ৭৯ পর্যন্ত প্রেসিডেন্সী কলেজের
দর্শন ও ইতিহাসে অধ্যাপনা । ১৮৭৯ সাল থেকে ১৮৮৬ পর্যন্ত বাংলা সরকারের
বেঙ্গলী ট্রান্সলেটর পদে কার্য। মৃত্যু ৩১শে অক্টোবর ১৮৪৫ সাল। ডঃ মহেন্দ্রলাল
সরকার প্রতিষ্ঠিত 'ভারতবর্ধীয় বিজ্ঞান সভা" র পরিচালক সমিতির সভ্য ছিলেন।
১৮৮২ সালে চন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে তিনি পাঠ্যপৃস্তক নির্বাচন করবার সমিতির সদস্য
রূপে কাজ করেন। তার লেখা গ্রস্থাবলী- -যৌবনোদ্যান' (১৮৬৮); 'মিত্রবিলাপ;
কাব্যকলাপ (১৮৭০); 'রাজবালা' (১৮৭০): "প্রথম শিক্ষা বাংলা ব্যাকরণ'
(১৮৭২); 'প্রথম শিক্ষা বীজগণিত" (১৮৭২); প্রথম শিক্ষা বাঙ্গালার ইতিহাস'
(১৮৭৪); 'কবিতামালা' (১৮৭৭); 'মেঘদূত' (১৮৮২); 'নানা নিবন্ধ (১৮৮৫) ।
ইংরেজি গ্রন্থাবলী --17010॥ [31011050191 (1888), 11701 1৬191170101
(1870), +119019 911401715 810 01111 01101117195 (1871), 11170500016
3010 06 0116 13011911 1.01119155 00 0119 0156 01 1:01006211 2110 139110911
501061105 (1883).
সূত্র £ সাহিত্য সাধক চরিতমালা ৪র্থ খণ্ড
বাংলা বিশ্বকোষ (ঢাকা)
৩০৮
৩৯
বিলাপ মালা
১১
নিরমল প্রেম অপার্থিব সুখ,
উপছিল তাহে কেন হেন দুঃখ,
ক্রমশ সঙ্কীর্ণ প্রেমনদী ম্খ;
বিশুঙ্ক পর্বত আঘাতে।
১২
মূল প্রস্রবিনী অবরুদ্ধ দ্বার,
কেমনে বহিবে জল ঝরণার
সম্মুখে অবলা নাশিতে।
১৩
বদ্ধ-প্রেম বেগ না বহি প্রবাহে,
মরমে মরমে গুমরেতে বহে,
গতি শুষ্ক বটে প্রেম শুঙ্ক নহে:
সতত অন্তর মাঝেতে।
১৪
বাহিরে পাহাড় হেরি ভয় মনে।
নাহি অন্তরালে বুঝিও পাষাণে
প্রেমনীর বিন্দু এ ভয় কারণে;
সদা ভয় মনে হেরিতে।
১৫
এড়াব কি করি এ কলঙ্ক দায়,
হারালেম কেন প্রেম প্রতিমায়;
কি হলো না পারি বুঝিতে।
গোবিন্দ চৌধুরী
৩২ বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ ৩য় খণ্ড
১৬
কে আসি আমারে বিষাদ করিয়ে
চিরস্খ আশা দিল বিনাশিয়ে
কলঙ্কের ভয়ে প্রেমে বিসর্ভিয়ে;
রহিতে হইল জগতে।
সম্পূর্ণ।
(লেখক-পরিচিতি পাওয়া যায়নি)
“পৃথিবীর সার পদার্থ মনুব্য,
মনুক্যের সার পদার্থ মন |?
শীহেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত
€১৮৩৮-৯১৯০৩)
সন ১২৬৮ । ইংরেজী ১৮৬১
৪০
চিন্তাতরঙ্গিণী
শীতল বাতাস বয়, জলের কল্লোল ।
রাঙা রবি ছবি লয়ে খেলায় হিল্লোল ॥
ধীরে ধীরে পাতা কাপে, পাথী করে গান।
লোহিত বরণ ভানু অস্তাচলে যান ॥
বিচিত্র গগনময় কিরণের ঘটা।
হবিদ্রা, পাটল, নীল, লোহিতের ছটা ॥
শীতল শরীর সেবি মলয় পবন ॥
হেন সন্ধ্যাকালে যুবা পুরুষ নবীন।
ভ্রময়ে নদীর কূলে একা একদিন ॥
ললাটের আয়তন, সুচারুবরণ।
লোচনের আভা তার মুখের কিরণ ॥
দেখিলে মানুষ বলি মনে নাহি লয়।
সুরপুর বাসী বলি মনে ভ্রম হয়॥
শাপেতে পড়িয়া যেন ধরার ভিতরে।
পূকর্ব কথা ' আলোচনা করিছে কাতরে ॥
এক দৃষ্টে এক দিকে রহি কতক্ষণ ।
কহিতে লাগিল যুবা প্রকাশি তখন ॥
“দেবের অসাধ্য রোগ, চিন্তার বিকার।
প্রতিকার নাহি তার বুঝিলাম সার ॥
নহিলে এখনো কেন অন্তর আমার।
ব্যঘিত হতেছে এত, দহনে তাহার ॥
চারিদিকে এই সব জগতের শোভা।
কিছুই আমার কাছে নহে মলোলোভা ॥
এই যে আলক্তময় ভানুর মণ্ল।
এই সব মেঘ যেন জলন্ত অনল ॥
৩৬
৪০৩
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -_ ৩য় খও
এই যে মেঘের মাঝে দিবাকরছটা।
সোনার পাতায় যেন সিদূরের ঘটা ॥
এই শ্যাম দৃকর্বাদল এই নদীজল ।
ম্ডিত লোহিত রবিকিরণে সকল ॥
নিরানন্দ রসহীন সকলি দেখায়।
নয়নের কাছে সব ভাসিয়া বেড়ায় ॥
মনের আনন্দে অই পাখী করে গান।
জানায় জগত জনে রবি অস্ত যান॥
উর্ধাপুচ্ছ গাভী অই পাইয়া গোধূলি ।
ধাইতেছে ঘরমুখে উড়াইয়া ধুলি ॥
কৃষক, রাখাল, আর গৃহী যত জন।
সেবিয়া শীতল বায়ু, পুলকিত মন॥
পৃথিবীর যত জীবন প্রফুল্ল সকল ।
অভাগা মানব আমি অসুখী কেবল ॥
ত্যজি গৃহকারাগার এনু নদীতটে।
দেখিতে ভবের শোভা আকাশের পটে ॥
ভাবিনু শীতল বায়ু পরশিলে গায়।
চিন্তার বিষের দাহ নিবারিবে তায় ॥
চিন্তা বিষের মন যার জ্বরে একবার ।
নিরুপায় সেই জন, বুঝিলাম সার ॥
এ ছবি”-__এমন কালে, প্রিয়সখা তার।
আসি, পাশে দাড়াইয়া, করে নমস্কার ॥
“একাকী এখনো হেথা কিসের কারণ ।”
বলিয়া সুধায় তায়, সেই বন্ধু জন॥
“এস এস এস ভাই, প্রাণের কমল।
দেখ বুকে হাত দিয়ে হলো কি শীতল ॥
ভেবেছি আমি হে সার নরক সংসার।
প্রাণী ধরিবার ঘোর কল বিধাতার ॥
সাধু পুরুষের নয় রহিবার স্থান।
ভীষণ নরক কু কৃপের সমান ॥
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দৌহাবলী
দৌরাত্ম্য, নিষ্ঠুরাচার, ধরা অলঙ্কার।
দ্বে, পরহিংসা, আর নৃশংস আচার ॥
দন্ত, অহংকার, মিথ্যা, চুরি, পরদার।
প্রতারণা, প্রতিহিংসা, কোপ অনিবার ॥
নরহত্যা, অনিবার্য সংগ্রাম দুরস্ত।
কত লব নাম তার নাহি যার অন্ত॥
পরিপ্নুত বসুন্ধরা, এই সব পাপে।
স্মরণ করিতে দেহ থর থর কাপে॥
প্রতিকার কিসে তার বল দেখি ভাই।
এই দেখ নদীজলে ঝাপ দিতে যাই ॥”
এই কথা বলি তারে আলিঙ্গন করি।
যেতে চায় নরসখা, সখা রাখে ধরি॥
ছি ছি ভাই পাগলের মত কত বল।
কাপুরুষ কথা কেন মুখে এ সকল॥
এ কথা শুনিলে তব পিতা কি ভাবিবে।
এ কথা শুনিলে জগতরা কি বলিবে॥
সে যে এ জগত তারা রমণীর মণি।
তোমা বই জানে না হে সরলা কামিনী॥
মনে কর সেই নিশি এই নদীজলে।
ভাসে তরি তার পরি, ঘুমায় সকলে ॥
প্রমত্ত তটিনী করে শশী আলিঙ্গন।
তারকা মালায় ঘেরা বিমল গগন ॥
ধূ ধূ করে চারিদিক হু হু করে প্রাণ।
আর পারে ন বিকেয়া করে সারি গান!
ভূতল আকাশ আর তরঙ্গিণী জল।
তরু বায়ু তারা রাজি চাদের মণল ॥
চক্ষে দেখা যায় আর কাণে শুনা যায়।
বোধ হয় প্রেম সুধা মাথা সমুদায় ॥
তুমি কাছে শুয়ে, জল নাচি নাচি চলে।
অশ্রজলে ভিজি রামা এই রূপে বলে॥
৩৭
০০৪ বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
'“আমি নারী অভাগিনী, পতি কোলে বিরহিণী,
না জানি করিছি কত পাপ,
সে ঠেলে চরণে করে, ত্যজিলাম যার তরে,
জননী ভগিনী ভাই বাপ॥
কথা যার মধুময়, মন যার প্রেমালয়,
সে কেন আমারে করে হেলা।
দেখে কিসে দেখে না, ভেবে কি সে ভাবে না,
অদ্তুত পুরুষের খেলা।
কেন বা হইবে আন, পুরুষের শত টান,
শন্ত্র শান্তর সংগ্রাম ভ্রমণ।
দ্যুতব্রীড়া রমণীরঞ্জন ॥
পুরুষের এই সব. পুরুষ নারী বিভব,
সবে নিধি অমূল্য রতন।
সেই ধ্যান সেই ধন, সেই প্রাণ সেই মন,
তবু তায় করে অযতন॥
যা হোক জীবন ছায়, রাখিব না আমি আর,
নদীজলে হইবে মগন।”
এত বলি উঠে গিয়া, তরি পৃষ্ঠে দাড়াইয়া,
একে একে খোলে আভরণ ॥
সাক্ষী করে চন্দ্র তারা, গণ্ড বেয়ে অশ্রুধারা,
দর দর বিগলিত হয়।
৪০৫ অভাগী পরাণে মরে, বলো সবে প্রাণেশ্বরে,
এ যাতনা আর নাহি সয়॥
এত বলি তোমা পানে, পূর্ণ দৃষ্টি রামা হানে,
শ্বাস ত্যজি ঝাপ দিতে যায়।
কত করে নিবারিনু তায় ॥
এখনো নয়নে বারি ঝরে বুঝি তার।
এই যে কাদিতে ছিল নিকটে আমার ॥
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দৌহাবলী ৩৯
দুই কর করে ধরি সজল নয়নে।
বলে মোরে ধীরে ধীরে করুণ বচনে॥
“সুধাইও, ওহে ভাই, তোমার সখারে।
কি কারণ অযতন করেন আমারে ॥
দাসী প্রতি প্রতিকল এত কেনে হন।
বারেক তুলিয়া মুখ কথা নাহি কন॥
কোন অপরাধে আমি আছি অপরাধী।
অহরহ ভাবি তাই, দিবানিশি কাদি।॥
বল তিনি কোন দোষ দেখেন আমার।
কি করিলে পরিতোষ হইবে তাহার ॥”
ভেবে দেখ, তারে তুমি কত দুখ দাও।
ভাল করে সাজা, বুঝি, এবে দিতে চাও।
সহায় বিহীনা, ভাই, রমণী অবলা।
সংসার সাগর মাঝে স্বামী মাত্র ভেলা ॥
একে ত নারীর জাতি পরের অধীনা।
তাহাতে অভাগা দেশে দাসী মত কেনা॥
পৃথিবী ভিতরে জানে পরিবার জন।
রন্ধনশালার সীমাভিতরে ভ্রমণ ॥
সে যদি পতির প্রেমে হইল বিমুখ।
এর চেয়ে তার তরে আর কি অসুখ ॥
বল দেশাচার দোষে পরের নন্দিনী ।
কি কারণ অকারণ দুখের ভাগিনী ॥
সত্য বটে তোমা দোহে বিস্তর প্রভেদ।
সত্য তার মনে মাথা অজ্ঞানের কর্লেদ ॥
তুমি বই সেই ক্লেদ বল কে মুছাবে।
অজ্ঞান আঁধার ঘোর আর কে ঘুচাবে ॥
বিদ্যাহীনা সেই জনা জানে না সকল।
ধর্মমাধন্্ম কর্্মাকম্ম কিসের কি ফল॥
পতি পৃত্র গুর জনে কিরূপ আচার।
কি করিলে সুস্থ থাকে দেহ আপনার ॥
৪০৭
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -_ ৩য় খণ্ড
তুমি যদি অবহেল অন্য কোন জন।
এই সব শিখাইবে করিয়া যতন ॥
প্রকৃতির অট্টালিকা কে দেখাবে তায়।
কে কাগ্ডারি হবে তার জীবনের নায় ॥
'অহে সখে, কি বলিবে, বুঝি হে সকল।
বুঝাইতে নারি ভাই মনেরে কেবল ॥
কেমনে এমন দেহ ধারণ করিব।
কেমনে সংসারপপাপে ডুবিয়া রহিব ॥
আমার আমার করি সকলে পাগল ।
হায় রে আপন পর জানে না কমল ॥
মনের মত লোক মেলে নারে ভাই।
বল বল সাধু জন কোথা গেলে পাই॥
ধম্মশীল অকুটিল আছে কয় জনা ।
কে না মিথ্যা বলে, কে না করে প্রতারণা ।
ইচ্ছা করে একেবারে পৃথিবী ঘুরিয়া।
নৃতন মানব জাতি আনি হে গড়িয়া ॥
কেন ভগবান হেন পৃথিবী রচিল।
কলুৰ পাথারে পরে কেন ডুবাইল ॥
মাটির শিকলে কেন আত্মা মন বীধা।
আলো আঁধারিয়া করি কেন দেন ধার্ধা ॥
মনে হয় ভেদ করি দেহের পিঞ্জর।
বিভু পাশে গিয়ে যোড় করি দুই কর॥
সুধাই এ নরলোক সৃজন কারণ।
আর আর লোক সব করি দরশন ॥
সঠিক বলিহে তোমা না করি গোপন।
এত দিন কোন কালে ফুরাইত রণ ॥
শুধু সেই অভাগিনী তোমা কয় জন।
পরকালভয়, ভাবি, পিতার কারণ ॥
বলিতে বলিতে দৌহে কথায় ভুলিয়া ।
নদী হতে কতদুরে আইল চলিয়া ॥
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দৌহাবলী ৪১
রমণীয় রূপ ধরে ভূতল গগন।
পরিয়া শারদ শশি রজত ভূষণ ॥
আলো পেয়ে কাক ডাকে দিবস ভাবিয়া।
রজনীর মন হাসে রহস্য দেখিয়া ॥
শীতল বাতাস বয়, যুড়ায় শরীর।
পাতায় পাতায় পড়ে নিশির শিশির ॥”
বিমল গগনে হাসে চাদের মণ্ডল।
নীল জলে যেন শ্বেত কমলের দল॥
চারিদিকে প্রকৃতির শোভা অগণন।
মহিমা হেরিয়া হয় ভকতি জনন ॥
যোড় করে দুই জনে মুদিল নয়ন।
অমনি গ্রামের মাঝে বাজিল বাজন ॥
ত্যক্ত হয়ে নরসখা কমলে সুধায়।
এখন কিসের তরে বাজনা বাজায় ॥
কমল বলিল, আজি সপ্তমী রজনী।
অধীর হইয়া নর কহিছে তখনি ॥
“দুবর্বল মানব মন সেই সে কারণ।
পূজে ভবদেব করি প্রতিমা গঠন॥
সাকার স্বরূপে তাই নিরাকারে ভাবে।
মাটী পূজা করি ভাবে মোক্ষ পদ পাবে ॥
একবার এরা যদি প্রকৃতি মন্দিরে।
প্রবেশি ডাকিতে পারে জগত বন্ধুরে ॥
শিব দুর্গা কালী নাম ভুলিবে সকল।
পরব্রন্দ নাম মাত্র জপিবে কেবল॥
কোথায় দেবের বৃন্দ তার কাছে আছে॥
কি প্রতিমা দশভূজা করেছে গঠন।
সে কি তার রূপ যার ব্রহ্াণ্ড সৃজন ॥
কথায় সৃজন যার, কথায় প্রলয়।
দশভূজা নারী রূপ তারে কি সাজায় ॥
৪
৪০৯
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _- ৩য় খণ্ড
কিবা জবা বিল্বদলে তৃবিবে সে জনে।
ধরা পূর্ণকলে ফুলে করেছে যে জনে ॥
কিবা ধূপ দীপ গন্ধ তার যোগ্য দান।
যেই জন ধূপ ধূনা কন্তুরি নিদান ॥
কি মন্দিরে তার মূর্তি করিবে ধারণ।
সসাগরা ক্ষিতি ব্যোম যাহার রচন॥
সার মন্ত্র জানি এক পরব্রহ্মনাম।
মুক্তিপদ জানি সেই পররব্রহ্মধাম ॥”
এত বলি ধীরে ধীরে তুলিয়া বয়ান।
কৃতৃহলে দোহে মিলে করে বিভুগান ॥
আনন্দে মিলাও তান, গাও রে বিভুর গান,
জয় জগদীশ বল জন।
ত্যজরে অনিত্য খেলা, ত্যজ রে পাপের মেলা,
ভজ রে তাহার শ্রীচরণ ॥
চারিদিকে তারাগণ ধায়।
সাজিয়া মোহন সাজে. বসিয়া ভবের মাঝে,
শশধর তার গুণ গায়॥
দিবস হইলে পরে, প্রচণ্ড রবির করে,
প্রকাশে তাহার মহাবল।
তার গুণ গাহিছে কেবল ॥
ভজ রে তীহার নাম, খোজ রে তাহার ধাম,
সেই জন ভবের ভাগ্ডারী।
সেই প্রভু ভয়ংকর, যমে যারে করে ডর
সেই জন ভবের কাগ্ডারী ॥
করেছি অনেক পাপ, সহিব অনেক তাপ,
দয়াময় দয়া করো নরে।
ঠেল না চরণে করে. দেখা যেন পাই পরে,
এই নিবেদন পাপী করে ॥
৪১০
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী ৪৩
গান করি সমাপন, প্রিয়া সখা দুই জন,
কিছু পরে ঘরে দেখা দিল।
এই কথা তখন বলিল ॥
“বৃথা চিন্তা কর দূর, রণ মাঝে হও শুর,
কি কারণ এত ভয় পাও।
বিপদে যে ভয় পায়, লোকে দেখি হাসে তায়,
পুরুষের প্রতাপ দেখাও ॥
এখন বিদায় চাই, ঘোর নিশি ঘরে যাই,
দেখো ভাই থাকে যেন মনে॥
অরুণ না দেখা যায়, পাখী না কাকলি গায়,
হেন কালে মিলিব দুজনে ॥"
ভোরে উঠি, গুটি গুটি, চলিল কমল।
নব নব পাতা সব. করে দল মল॥
দুই চারি তারা ধরি প্রহরীর বেশ।
ধিকি ধিক, ঝিকি মিকি, করে নিশি শেষ॥
পায় পায় সখা যায়, নরসখা বাসে।
মনোহরা, জগতরা, দেখে পতিপাশে ॥
পাখা হাতে, প্রাণনাথে করিছে সেবন।
সারা নিশি, কাছে বসি, অলস নয়ন॥
সে বরণ, সে বদন, সে নয়ন চুল।
সে বলল, সে চরণ-বরণ-হিঙ্গুল ॥
দিন দিন, বিমলিন, শুখাইয়া যায়।
জাগরণে, বরাননে বিরস দেখায় ॥
তবু তার, রূপ ভার, হেরিলে নয়ন।
কভু আর ভোলা ভার, জনম মতন ॥
পায় পায়, কাছে যায়, কমল সুধীর।
অপরূপে দেখে রূপ, দোহে হয়ে স্থির॥
নিরমল, যেন জল, করে পরিষ্কার।
সেইরূপে অপরূপ, হয় রূপ তার ॥
৪8৪
৪৯৯
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
মুখভাতি, স্থিরজ্যোতি, ক্রমশ উজ্জ্বল।
প্রসারিত, সঙ্কুচিত, ললাটের স্থল ॥
ওষ্ঠাধর, থর্ থর্. কাপে ঘনে ঘন্।
যেন কোন, সুস্ষপন, করে দরশন ॥
থেকে থেকে, একে একে, প্রফুল্ল সকল।
নাসা. কর্ণ গণ্ডবর্ণ, হয় সমুজ্জ্বল ॥
অপরূপ, সেই রূপ. হেরি পতিব্রতা।
ভাবে দেব, কোন দেব সনে কন কথা ॥
দণ্ড দুই, কাল বই, নরসখা জাগে।
দেখে সখী, একমতি, বসে শিরোভাগে ॥
হৃষ্মতি, দ্রুতগতি, প্রিয়াকর ধরে।
চমকিত, পুলকিত, কয় দ্রুতস্বরে ॥
মরি কি দেখিনু, কোন খানে ছিনু,
এখন কোথায় রই।
কোথা নিরমল. সেই সুধাজল,
সে মোহন পুরী কই॥
কোথা মনোলোভা. দশদিশশ্োোভা,
অতুলিত আভা কই।
এ আলো সে নয়, এ বাতাস নয়,
এ যে পাখী ডাকে অই॥
সেরূপে সুন্দর, পুরী মনোহর,
নাহি ভুমণ্ডল মাঝে।
বিশ্ব বিনোদন, বিমল কিরণ,
তাপ হীন শোভা সাজে ॥
ভানু মহাবল, চন্দ্রমা শীতল.
দূরে নিরুজ্জ্বল রয়।
তাহে পুরীশোভা হয় ॥
৪৯২
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী ৪৫
বহে গন্ধ চমৎকার ॥
"জুরা মৃত্যু নাই”, সব্ব্বশ্তভ ঠাই,
চির আনন্দিত লোক।
নাহি জানে কেহ শোক॥
আসীন বেদির পরে।
ঝলমল করে, বেদি আভা ধরে,
নিন্দি রবিকোটি করে॥
যষোড় করি উভ হাত।
সাধু যত জন, গাহন বাজন,
আর করে প্রণিপাত॥
প্রেম রোমাঞ্চিত, দেহ সকম্পিত,
গাহিল ভকত জন।
সংগীত শুনিল, ভকতি পূরিল,
পামর মানব মন॥
কি দেখিনু আহা, পুন কি রে তাহা,
কভু .দেখিবারে পাব।
এ পাপে না রব. এ তাপ না সব.
ত্বরায় সেখানে যাব ॥
নিরমল ঠাই, তাহে পাপ নাই,
সে যে সাধুজনধাম।
অই শুনা যায়, অই গীত গায়,
ডাকে মহাপ্রভুনাম ॥
বলিছে কানেব কাছে।
তার সনে যাব, সুখধাম পাব,
আর কি তেমন আছে ॥
৪৬ বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
৪১৩ বলিতে বলিতে কথা না থামিতে,
সক্ষিত হারায় তেহ।
কমল কামিনী, ত্বরা বারি আনি,
সুশীতল করে দেহ ॥
চেতন পাইয়া যুবা কাপিতে লাগিল।
আখীজলে যুবতীর বদন ভাসিল॥
তখন কমল একা বিপাকে পডিয়া।
কহিতে লাগিল তারে সান্ত্বনা করিয়া ॥
সুবোধ হইয়া কেন অবোধ হইলে।
কি দেখি এতেক, সতি, আতঙ্ক ভাবিলে ॥
সামান্য হয়েছে জবর, কত দিন রবে।
তার তরে এত বল ভাবিলে কি হবে॥
আশু যাতে রোগ যায় করহ উপায়।
আমি সদা কাছে রব ভয় কিবা তায়॥
শুনিযা সুন্দরী বারিধারা নিবারিল।
একমনে স্বামী সেবা করিতে লাগিল ॥
ভালয় ভালয় রোগী নিরোগী হইল ।
দুর্বল শরীর তবু সবল নহিল ॥
ভগ্ন দেহে ভগ্ন মনে বাড়িল হুতাশ।
পতি লাগি পতিব্রতা হইল হুতাশ।
নিরজনে একদিন ডাকিয়া কমলে ।
ছল্ ছল্ নেত্রে জল জগতারা বলে॥
কপালে কি আছে মোর বুঝিতে না পারি।
কেহ আর নাই মোর আমি একা নারী ॥
দেখ দেখি দিন তিনি শুকাইয়া যান।
উদাসীন ভাব সদা অলস নয়ান ॥
৪১৪ হয় হল নয় নেই খেতে নাহি চান।
যখন তখন দেখি বিরস বয়ান ॥
দুই চারি কথা কন সদাই নীরব।
বল কিছু স্থির হয়ে শুনিবেন সব॥
৪১৫
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী
বুঝেছি অভাগী আমি বিধাতা বিমুখ।
কত সুখ আশে আগে নাচিত, হে. বুক॥
কতদিন কত মত ভেবেছি হে ভাই।
এবে বুঝি হল ভোর, আর আশা নাই॥
এমন কি মহাপাপ করেছি হে আমি।
কে দিল আমারে শাপ, তাই হেন স্বামী ॥
উপকথা ছেলেবেলা শুনেছিনু ভাই।
ক্রমাগত দিবানিশি মনে পড়ে তাই।॥
অপরূপ পাখী পেয়ে নারী একজন।
সোনার খাচায় থুয়ে করিত যতন॥
তারি সেবা আটপর সদত করিত।
পড়াত, খাওয়াত, হাতে তুলিত পাড়িত॥
একদিন ফাকি দিয়া পাখী উড়ি যায়।
কেও কোথা তারে আর খুঁজিয়া না পায়।
অন্য রোগ নহে, এযে চিন্তা রোগ কাল।
কি হবে বল হে, সখে বিষম জঞ্জাল ॥
একবার তারে তুমি বল ভাল করে।
অই দেখ আসিছেন, ঘাড় হেট করে॥
“কেমন আছ হে আজি? নিরুত্তর কেন?
অতিশয় ল্লান ভাব দেখি কেন হেন"?
“আমার সংসারে আর থাকি কিবা ফল।
কি হবে থাকিয়া হেথা, প্রাণের কমল !
দেশাচার রাক্ষসীরে বধিতে নারিনু।
স্বদেশের দুঃখভার ঘুচাতে নারিনু।
জনমদাতার ধার শোধিতে নারিনু।
দিন দিন মহাপাপে ডুবিতে লাগিনু॥
মনের বাসনা কই পরাতে পারিনু।
মানবমণ্ডলী কই পবিত্র করিনু।
প্রীতিবারি সমাজেতে সেচিলাম কই।
স্বার্থ, দ্বেষ, পরহিংসা, নাশিলাম কই॥
৪৭
৬৬
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -_ ৩য় খণ্ড
কই আপনার মন নিরমল হল।
কই ধন্মপিথে মন স্থির হয় বল॥
হায় ও বয়সে, কত পাপ করিলাম!
কত ছলিলাম, কত মিথ্যা বলিলাম!
তাহে দিন দিন ক্ষীণ হয় বুদ্ধি বল।
পৃথিবীর ভার দিন বাড়াই কেবল ॥
শ্িতৃগলগণ্ড হয়ে কত কাল রব?
অনুতাপ শিখা আর কতকাল সব?
আহা কি সুখেত কাল শিশুরা কাটায়!
অই দেখ নাচি নাচি কয় জনা ধায়॥
মনের সাধেতে লেখা কর এই বেলা।
এখনি হইবে সন্ধ্যা ভাসাইবে ভেলা ॥
দিন কত থাক আর জানিবে তখন ।
আনন্দের ধাম এই পৃথিবী কেমন ॥
অই বেলা কত খেলা আমিও খেলেছি।
অই বেলা কত আশা আমিও করেছি ॥
এখন বৃঝেছি সার, অসার সংসার।
দণ্ড দুই আলো, পরে ঘোর অন্ধকার ॥
ভবের এ নাট্যশালা ছায়াবাজী প্রায়
“দিন দুই ধৃমধাম পরেতে ফুরায় ॥
মধুময় শিশুকাল কত দিন রয়।
যৌবন সৌরভ দিন চারি বই নয়॥
বিষয়ী লোকের মান, আজি আর কালি।
প্রবল পবনে যেন উড়ে মরুবালি।
বীরের বীরত্গুণ প্রথম গ্রথম।
বিস্তারিত দশ দিকে চাপাগন্ধ সম॥
কিন্তু যেন মধ্যাহেন্র প্রথর মিহির ।
বৈকালে লুকায় আড়ে মেঘ সুগভীর ॥
বিঘোর আধারময় এ ভব ভিতরে।
সুখ সাহা দেখ তাহা মুহূর্তের তরে ॥
৪১৭
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী ৪৯
অমানিশা, তাহে মেঘ কালির বরণ।
তার মাঝে যেন সৌদামিনী দরশন ॥
আঁধার নিশিতে যেন তারার পতন।
জলবিহ্ন ক্ষণে যেন জলেতে মগন ॥
শরতের মেঘ যেন ঘন ঘন ডাকে।
বৃথা আড়ম্বর উড়ে যায় ফাকে ফাকে॥
সাগর তটেতে যেন বালির নিম্মাণ।
একটি তরঙ্গ পরে না থাকে নিশান ॥""
"সে কি ভাই, হেন ভাব কেন হে তোমার
ভগ্ন আশা কি কারণ হলো আর বার ॥
কি ছার পাপের ঢেউ দেখি ভয় কর।
পায়ে করি ঠেলে দাও, নিজ বীর্য ধর॥
সাগরের মাঝে যেন অক্ষয় অচল।
বৃথায় প্রহারে ঝড় তরঙ্গের দল॥
সেইরূপ সাধুজন সংসার ভিতরে।
বদ্ধমূল স্থিরভাব আপনার ভরে ॥
কিছুকাল কষ্ট পায় ধার্মিক সুজন।
অনন্ত কালের তারা মুখের ভাজন ॥
কে তোমারে বলিল হে অকর্ম্মণ্য তৃমি।
তোমামত লোক আছে তাই আছে ভূমি ॥
সাধু মহাজন গুণে আছে ধরাতল।
নহিলে সে কোন্ কালে যেত রসাতল ॥
“কি করিব আর আমি” সদা বল ভাই।
দেখ দেখি মনে ভেবে কিছু কর নাই॥
এত জনে নীতি শিক্ষা কে করিল দান।
পাপ হতে একজনে কে করিল ত্রাণ ॥”
সত্য বটে যা বলিলে বুঝিনু কমল।
আজি আর থাক, কালি, বলিহ সকল ॥
নিদ্রা ইচ্ছা আজি কিছু হতেছে সকালে।
যথ পারো বলো, সখে. কাল শ্রাতঃকালে ॥
৪১৮
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _ ৩য় খণ্ড
কমল চলিয়া যায়, নরসখা কয়।
আর দেরি করা মোর পরামর্শ নয় ॥
প্রাণের কমল শুনি, সকালে কি কবে।
কি করি থাকিতে আর নাহি পাবি ভবে॥
যাই দেখি একবার বাহিরে বাতাসে ।
দেখে আসি কমল ফিরিয়া নাকি আসে॥
এত বলি অবিলম্বে বাহিরে আসিল ।
নিরখি গগন শোভা কহিতৈে লাগিল ॥
“থাক থাক শশধর, বিরাজ আকাশে ।
তুমি না থাকিলে কেবা, তিমিরে বিনাশে ॥
মাসে মাসে তুমি ত হে কত দেশে যাও।
ভালমন্দ কত লোক দেখিবারে পাও ॥
অপটু আমার মত দেখেছ কি কারে।
আর আর লোক সব বলে কিবা তারে ॥
অহে ও, তারার বৃন্দ আকাশের বাতি।
লক্ষ লক্ষ যোজনেতে প্রকাশিত ভাতি॥
কোথায় অভাগা হেন দেখেছ কি আর।
দেখে থাক বল তবে কিবা নাম তার ॥
ধরাতল তোর বুকে আর কত জন।
মোর মত কাপুরুষ করে জাগরণ ॥__
কোথা যাও শশধর রহ একপল।
বারেক মনের সাধে হেরির ভূতল ॥”
বলিতে বলিতে শশী পশ্চিমে ডুবিল।
শ্বাস ত্যজি নরসখা গেহেতে পশিল ॥
ঘোর নিদ্রা অভিভূত দেখিল সকলে।
আপন মন্দিরে তরে ধীরে ধীরে চলে ॥
দেখে চেয়ে খাটে শুয়ে সোনার পুতলি।
ল্লানভাব, যেন তবু হানিছে বিজলী ॥
জাগরণে অচৈতন্য নিদ্রা যায় সতী।
একদৃন্টে দণ্ডাইয়া রহে তার পতি ॥
৪৯৯
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী রর
মুদিত নয়না মুখ হেরে বার বার।
কভু যায় কভু আসে, কভু পাশে তার॥
কভু পৃতুলের মত স্থিরতর রয়।
অবশেষে ধীরে ধীরে মৃদুস্বরে কয়॥
“বিদায় জনম শোধ দাও প্রণয়িনী।
রাখিতে না পারি আর এ পাপ পরাণী ॥
এই বেলা সকালে সকালে ভঙ্গ দিব।
পলাব ভবের ব্যহে আর না রহিব॥
অভেদ পাষাণে মোর মন বাধা প্রিয়ে।
আগে চলে যাই আমি তোমারে ফেলিয়ে ॥
আমা বই জান না যে তুমি রে অবলা।
ভেবেছ উন্মাদ পতি হায় রে সরলা ॥
ক্ষমা কর প্রেমময়ি আমি অভাজন।
কপালে থাকে ত হবে পরেতে মিলন ॥
এত বলি ঘন ঘন করি দরশন।
“নিঃশব্দ চরণে যুবা করিলা গমন॥
চকিত নয়নে সদা চারি দিকে চায়।
সদা ভয় জাগি পাছে কেহ টের পার॥
পায় পায় উপনীত নিরূপিত ঘরে।
ধবড় ধবড় কুরে বুক ঘরের দুয়ারে ॥
সাহসে করিয়া ভর প্রবেশিল তায়।
সাংঘাতিক রজ্জু ঝোলে দেখিবারে পায় ॥
আপাদমস্তক দেখি অমনি শিহরে।
পরকাল ভয় তবে আক্রমণ করে ॥
“পলাব, কি রব, কি জানি কি হবে পরে।
নতুবা, আর বা এ ভবে রব কি করে॥
অথবা, ভাসিয়া, ভাসিয়া, মিলিবে কুল।
যদি মাঝে ডুবে যাই তবে ত প্রতুল॥
কুল হতে সলিলেতে নামিয়াছি সবে।
এখনি কোমর জল পরে কিনা হবে॥
৫
৪২০
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
এখনো ওঠেনি ঝড়, হয় নি তুফান।
না জানি তখন তবে হবে কত টান ॥
সে পথে হে কাটা নাই জানিনু কেমনে।
তাই বলে এ নরকে পচিব কেমনে ॥
হায় কী বা ছার কীট আমি হীন নর
কোটি কোটি জীব আচে বিশ্বের ভিতর ॥
অথবা অন্তরযামী জানেন সকল।
তবে ত ভুগিতে হবে সমুচিত ফল ॥
কিন্তু তিনি দয়াময় পাতকীতারণ।
অবশ্য অবোধ বলি দণ্ড নিবারণ ॥
দয়া না করিলে তিনি কেবা রক্ষা পাবে।
আমূল মানবজাতি নরকেতে যাবে ॥
অবশ্য সদয় তিনি কাতর দেখিলে।
অবশ্য নিস্তার পাব তাপ নিবেদিলে ॥”"
এত বলি ধীরে ধীরে, ফাস জড়াইল।
হাতে তুলি কত বার ভয়ে ছাড়ি দিল ॥
কতবার জগতারা মনেতে পড়িল।
কতবার বৃদ্ধ পিতা স্মরণ হইল ॥
অবশেষে প্রবল নিশ্বাস ত্যাগ করি।
চক্ষু মুদি দৃঢ় করি রভ্জু হস্তে ধরি ॥
বলিতে বলিতে প্রাণ ত্যজে নরসখা ॥
ভ্রান্ত হয়ে অহে নর কুমার্গে পশিলে।
কেমন করাল পরকাল না বুঝবিলে ॥
যাতনা এড়াব বলে পয়ান করিলে।
হায় কি হইবে সেই আশা না পূরিলে ॥
ভায় ভগবান ভোলা প্রতি ক্ষমাবান।
না বুঝিলে জ্ঞানতত্ব নিগুঢ় সন্ধান ॥
কোটি কোটি পাশপী, তথা, কৃতাঞ্জলী করে।
“ক্ষমা কর ক্ষমা কর” ডাকিছে কাতরে ॥
৪২১
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী ৫৩
নিকটে যাইবা মাত্র নহিবে নিস্তার ।
আগে হবে প্রায়শ্চিত্ত, পরেতে উদ্ধার ॥
এর চেয়ে সে যাতনা বেশি যদি হয়।
তবে ত বিফল তব আশা সমুদয় ॥
পর দিন মহাগোল করে পরিজন।
জগতারা উর্ঘাতারা ভূতলে পতন ॥
কমল আসিয়া দেখি ভাসে আখি জলে।
অধীর হইয়া ধীর কাদি কাদি বলে॥
কমল কাদিয়া কয় ধূলায় পড়িয়া রয়,
হেমময় প্রতিমার মত।
সঘনে বহিছে শ্বাস, বদনে না সরে ভাষ,
কপালে প্রহার চিহ্ন কত॥
এক পল স্থির নয়, কভু আখি মুদি রয়
কভু দুই হাত বাড়াইয়া।
সহাস বদনে চায়, যেন কার দেখা পায়
মনে করে রাখিব ধরিয়া ॥
এস হে প্রাণের সখা একবার দাও দেখা,
এরে তুমি ছাড়িলে কেমনে।
কি ভাবিয়া ভঙ্গ দিলে রণে॥
কেন ভুলিলাম তব ছলে।
যত আশা মনে ছিল, একেবারে ফুরাইল
একা রাখি আগে গেলে চলে॥
কমলে বাসিতে ভাল কাছে রাখি চিরকাল
মনোকথা বলিতে খুলিয়া।
মধুর কবিতা ধার হারিলাম কত বার
একাসনে দুজনে বসিয়া ॥
কতবার একাসনে দৌোহে মিলি সংগোপনে,
পৃজিলাম জগতের পতি।
৫8 বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -_ ৩য় খণ্ড
এবে কেন একা রাখি, পলাইলে দিয়া ফাকি
কে তোমারে দিল হেন মতি॥
৪২২ এ পাপ করিলে কেন কুমতি হইল কেন
বৃদ্ধ পিতা কেন হে কাদালে।
পতিপ্রাণা সতীনারী পরাণে মারিলে তারি
বন্ধজনে শোকেতে ভাসালে ॥
না ফুরায়ে কথা সুবর্ণের লতা
ধিরে আখি পাতা মুদিল।
রাজার ভবন বিজনকানন
পিতা পুত্র বধূ মরিল॥
যত পরিজন অতিক্ষুপ্ন মন
স্বামীশূন্য গৃহ ত্যজিল।
বন্ধুজনগণে নিরানন্দ মনে
হা হা রবে দিক পূরিল॥
প্রতিবাসীগণে চেতিল।
দিন দুই ধরি আহা আহা করি
পুন দেহ যোগে পশিল॥
হাসি কান্না ভরা এই বসুন্ধরা
বিশ্ববিরচক রচিল।
সত্য নাম তার অনিত্য সংসার
রচয়িতা সার ভাবিল॥
পসরা
৪২৪
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী ৫৫
সদগুরু পাওয়ে, ভেদ্ বতাওয়ে,
জ্ঞান করে উপদেশ।
তও কোয়েলা কি ময়লা ছোটে,
যও আগ করে পরবেশ্॥
সদগুরু যদি হয়, ভাব ভেঙ্গে জ্ঞান দেয়
উপদেশে যদি বসে মন।
সব মলা ঘুচে যায়, কালো আঙ্গারের গায়
অগ্নি তায় প্রবেশে যখন॥
তুলসী জপ্ তপ্ পৃজিয়ে,
সব্ গোড়িয়াকি খেল্।
যব প্রিয়সে সর্বর্ হোয়ি,
তো, রাখ্ পেটারি মেল্॥
তুলসীরে জপ্, তপ্ ভজন পূজন।
অমনি সে পেটারায়, গুটোনো তখন ॥
তুলসী যব্ জগ্মে আয়ো,
জগো হসে তোম্ রোয়্।
আযায়সে কর্ণি কর্চলো কি,
তোম্ হসো জগো রোয়্॥
তুলসী সংসার মাঝে, আইলে যখন ॥
জগৎ হেসেছে, তুমি করেছ ক্রন্দন্॥
হেন কাজ করে চলো জগৎ মাঝার্।
তুমি হেসে চলে যাবে, কাদিবে সংসার ॥
৫৬
৪২৫
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খও
চলতি চক্কি দেখ কর্, মিঞা কবীরা রো,
দো পাটন কি, বীচ আ, সাবিৎ গয়ানা কো॥
জাতা ঘোরে দেখে দুখে কবীর মিঞা বলে।
আস্ত নাহি থাকে কেহ, পড়ে পাটের তলে॥
চলতি চক্কি সব কোই দেখে,
কীল্ দেখেনা কোই।
যো কীল্কো পাকডুকে রহে,
সাবেৎ রহা হেয় ওই॥
জাতা ঘোরে সবাই দেখে, খিল্ দেখেনা কেই।
খোটা ধরে যে জন্ বসে, গোটা খাকে সেই।
নাভিকে সুগন্ধ মৃগ নহি জানত,
ঢুড়ৎ ব্যাকুল হোই ॥
সকল ঘটেত হরি. কেউ না চিনিতে পারি.
হরি হরি কবিয়ে বেড়ায়।
সুগন্ধ নাভির মাঝে, তবু মৃগ সেই ঝাঝে
ছুটে ছুটে চারি দিকে ধায়॥
দুখ পাওয়ে তো হরি ভজে, সুখে না ভজে কোই।
সুখ্মে যো হরি ভজে, দুখ্ কাহাসে হোই ॥
দুঃখে সব ভজে হরি, সুখে ভজে কবে।
সুখে যদি ভজে হরি, দুঃখ কেন তবে॥
হরিকে হরিজন বহুৎ হেয়।
হরিজন্কো হরি এক্।
শশীকে কুমদন্ বহুৎ হেয়,
কুমদন্ কো শশী এক ॥
চিন্তাতরঙ্গিবী ও দোহাবলী ৫৭.
হরির অনেক আছে, হরিভক্ত জন্।
ভক্তগণে আছে মাত্র, সেই হরি ধন॥
চাদের অনেক আছে, কুমুদিনীগণ।
কুমুদের একা সেই, কুমুদরঞ্জন্॥
দুখ্কে বলিহারি যাই।
আয়্সে দুখ আওয়ে, যো,
ঘড়ি ঘড়ি হরিনাম সৌরাই॥
সুখে পড়ক কাজ, দুখে বলিহারি, আয় রে এমন দু'খ্।
ঘড়ি ঘড়ি যেন হরিনাম স্মরি. পাইরে পরম সুখ্ ॥
তুলসী পিদনে হরি মেলে তো,
মেয় পেঁদে কুদা আউর ঝাড়।
পাথর্ পূজনে হর মেলে তো,
মেয় পূজে পাহাড় ॥
তুলসীর মালা নিলে, তাতে যদি হরি মিলে
আমি তবে ধরি গুড়ি ঝাড়।
পাথর পৃজিলে ভাই, হরে যদি দেখা পাই
কেন তবে না পুজি পাহাড়॥
নিৎ নাহেনে সে, হরি মেলে তো,
জলজন্তু হোই।
ফল্ মূল্ খাকে, হরি মেলে তো,
বাদুড় বাদরাই ॥
তিরণ ভখন কে হরি মেলে তো
বহুৎ মুগী অজা।
স্ত্রী ছোড়কে হরি মেলে তো,
বহুৎ রহে হেয় খোজা
৫৮
৪২৭
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খও
দুদ পিকে হরি মেলে তো
বহুৎ বৎস বালা।
মিঞা কহে বিনা প্রেমসে,
না মিলে নন্দলালা।
নিত্য যদি প্রাতঃক্সানে, হরি মিলে ভাই।
জলজন্তু হয়ে সবে, এসো না বেড়াই ॥
ফলমূল খেয়ে যদি হরি মেলে ভাই;
বাদুড় না হই কেন, করি বাদরাই ॥
তৃণ ঘাস খেলে যদি, হরি মেলে ভাই।
হরিণ ছাগল মৃগ, আছে ত মেলাই॥
স্ত্রী ছাড়িলে তাহে যদি, হরি পাওয়া সোজা,
জগতে আছে ত ভাই, বহুতর খোজা ॥
দুদ্ধ পানে দেহ ধরে, হরি যদি পাই।
দুদ্ধীপোষ্য বালকের অভাব তো নাই॥
কহিছে কবীর মিঞা, সবারে সুধাই।
বিনা প্রেমে নন্দলালে, মিলে না কোথাই ॥
বোল্কে মোল্ নাহি, যো কহেনে জানে বোল্।
হৃদয় তরাজু তৌল্্কে, তহু বোল্্কে খোল্॥
সে কথার মূল্য নাই, বলতে যদি জালো।
মন্তৌলে ওজন করে, তবে কথা এনো॥
যো থাকো শরণ্ লিয়ে, সো রখে তাকো লাজ্।
উলট জলে মছৃলি চলে, বহি যায় গজরাজ॥
যে যার শরণ লয়, সে তার সহায়।
উজানে চলেছে মাছ, হাতী ভেসে যায় ॥
বেহা বেহা সব্কোই কহে, মেরা মন্মে এহি ভাওয়ে,
চড় খাটোলি ধো ধো লগড়া, জেছেল্ পর্লে যাওয়ে।
৪২৮
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী ৫৯
বিয়ে বিয়ে বলে সবে, আমার মনে ভয়।
বাদ্যভাওড চতুর্দোলে জেলে নিয়ে যায়
পলক্ পলক্ লহ্ু চোষে।
দুনিয়া সব বাউরা হোকে,
ঘর্ ঘর্ বাঘিনী পোষে।
রক্ত খায় পল্ পল ।
তবু ঘরে ঘরে দুনিয়া পাগল
পৃষিছে বাঘিনীদল ॥
বহুৎ ভালানা বোল্না চল্না, বহুৎ ভালানা চুপ্।
বহুৎ ভালানা বর্ষা বাদর, বহুৎ ভালানা ধূপ্॥
বেশী ভাল নয় বলা কি চলা, বেশী ভাল নয় চুপ।
বেশী ভাল নয় বর্ষা বাদল্, বেশী ভাল নয় ধূপ্॥
ভাট্কে ভালা বোল্না, চাল্ না বহুড়ীকে ভালা চুপ।
ভেকৃকে ভালা বর্ষা বাদর্, অজকে ভালা ধূপ॥
ভাটের বলা চলাই ভাল, বয়ের ভাল চুপ।
বর্ধা বাদল ব্যাঙের ভাল, ছাগের ভাল ধৃপ॥
বিপদ বরাবর্ সুখ নহি, যৌ থোড়া দিন্ হোয়ে।
লোক্ বন্ধু মৈত্রতা, জান্ পড়ে সব কোয়॥
বিপদ সুখের হয় অল্প দিনে যদি যায়,
সে বিপদ বন্ধু বলে মানি, লোক মিত্র সঙ্গীজন,
মৈত্রতায় কে কেমন, অল্পক্ষণে সব জানাজানি ॥
৪.৯
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
স্রীৎ না টুটে অন্ মিলে, উত্তম মন্কি লাগ।
শও যুগ পাণিমে রহে, মিটে না. চকমককে আগ ॥
ভালো নিকটে খাটে না প্রণয়
আরো যদি শত মিলে।
শতযুগ জলে থাকিলে চকৃমকি
তবুও আগুন জলে ॥
চন্দা বসে আকাশ।
যো জন্ যাকে হৃদ বসে,
সে জন্ তাকো পাশ্॥
জলে কুসুমের বাস, চাদের আকাশে ।
যে যার বৃকের মাঝে, সেই তার পাশে ॥
যো যাকো পেয়ার মাগে,
সো তাকো করত বাখান্।
মানত অমৃত সমান ॥
যে যাহাকে ভালবাসে, সে তাকে বাখানে।
বিষ্মাছি বিৰ খেয়ে, অমৃতই জানে ॥
যে প্রাণী পররেশ পরো,
সো দুখ মহত অপার্।
যুথপতি গজ হোই, সহে,
বন্ধন অন্কুশ মার্॥
পরাধীন পরাণীর দুঃখ না নিবাড়ে, যুথপতি গজরাজ
তাহারও বন্ধন সাজ, ডাঙ্গসের বাড়ি কত দিন পড়ে ঘাড়ে ॥
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দোহাবলী ৬১
উদর্ ভরণকে কারণে, প্রাণী ন করতয়ি লাজ।
নাচে বাচে রণ্ ভিরৈ, বাছে ন কাজ অকাজ॥
৪৩০ উদর পূরাতে না করে ভরম
কেহই দুনিয়া মাঝে ॥
রণে যায় ভীরু কেহ খেলে বাচ
কেহ নাচে কেহ সাজে॥
বাছে না কাজ অকাভজো ॥
তন্কি ভূক তনক হেয়, তিন পাপকে সের্।
মন্কি ভূক অনেক হেয়, নিগ্লত মের সুমেরু॥
তিন্ পোয়া নয় সেরের ওজনে, উদরের ক্ষুধা যায়।
মনের ক্ষুধা মিটে না সে কভু সুমের যদিও পায়॥
গোধন গজধন বাজীধন
আওর্ রতন ধন খান্।
যব আওত সন্তোষ ধন,
সব ধন ধূরি সমান ॥
গজ বাজীধন্ কিবা সে গোধন
কিবা রতনের খনি।
ধূলির সমান. সব হয় জ্ঞান
মিলিলে সন্তোষ মণি ॥
কৌন কাহু সুখ দুখ কর্ দাতা,
নিজ কৃত কন্মভোগ সব ভ্রাতা।
জন্ম হেতু সব কহ পিতু মাতা,
কর্ম্ম শুভাশুভ দেই বিধাতা ॥
কেবা কার, কহ শুনি, সুখ দুঃখদাতা।
নিজকৃত কম্মভোগ কর সব ভ্রাতা॥
জন্ম হেতু ভবতলে পিতা আর মাতা ।
শুভাশুভ কর্ম দেন কেবল বিধাতা ॥
৬
৪৩১
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _- ৩য় খও
কাহা কহো বিধিকি গতি, ভুলে পড়ে প্রবীণ ।
মূরখকে সম্পতি দেয়ি, পণ্ডিত সম্পতি হীন্॥
কে জানে বিধির খেলা, জ্ঞানী ও অজ্ঞান
পণ্ডিত সম্পদ হীন, মুর্খ ধনবান ॥
ধনমদ তন্মদ রাজমদ, বিদ্যামদ অভিমান্।
এ প্াাচকো আউটকে পাওয়ে পদ নিবর্বাণ ॥
ধনমদ বিদ্যামদ, রূপ অভিমান
রাজপদ আর, এই পাঁচখান ;
এ পাঁচে জিনিতে পারো, পাইবে নিবর্বাণ।
তুলসী জগৎমে আইয়ে
সবসে মিলিয়া ধায়।
না জানে কোন ভেকমে।
নারায়ণ মিল যায় ॥
জগতে আসিয়া তুলসী ভকৎ সবে মিলে জুলে যায়।
জানে না কখন কোন পথে গিয়া, নারায়ণে দেখা পায়।
ভক্তি বীজ পল্টে নহি, যৌ যুগ যায়, অনন্ত।
উচ নীচ খর আওতরে, ফের সম্ভকে সম্ভ॥
ভক্তিবীজ বসে যদি বিধিয়া হৃদয়।
অনন্ত যুগেও তার নাহি হয় ক্ষয় ॥
উচ্চ কিংবা নীচ ঘরে যেথাই ভ্রমণ।
জনম জনমান্তরে সাধু যেই জন॥
নি্ভখণ হেয় সো, পিতা হামারা
সগুণ হেয় মাহতারি।
কাকে নিন্দ্যো কাকে বন্দ্যো,
দুয়ো পাল্লা ভারী ॥
চিন্তাতরঙ্গিনী ও দৌহাবলী ৬
পিতা সে নিরুণ মাতা যে আমার
সগুণ স্বরূপ তার।
কারে বন্দি বলো আর ॥
হাজি হাজি কর্তে রহিয়ে, বসিয়া আপনা ঠাম্॥
সব্ রস্ নেবে সবেতে মিলিবে
সব নাম করো ভাই।
না ছেড়ো আপন ঠাই ॥
কবীরা খড়ে বাজার্মে লিয়ে লুকাটি হাত্র।
যৌখর্ ফুকে আপনা, চলো হামারে সাথ্॥
কবীরা দাড়ায়ে আছে।
ঘর্ ঘর্ ফিরে ডাকিছে সবারে
কে আসিবি আয় কাছে॥
অলী পতঙ্গ মৃগ মীন্গজ্, ইয়াকো একহি আঁচ।
তুলসী ওয়াকো ক্যা গৎ, যাকো পিছে পাঁচ॥
ভ্রমরা পতঙ্গ মুগ হাতী মাছ, এক রিপু মাতোয়ারা ।
ঘ্রাণ, রূপ, রস, শ্রবণ, পরম, জ্বালাতে অস্থির তারা ॥
তাদের কি গতি হবে রে তুলসী, যাদের পেছনে পাঁচ।
রিপু মিলে সদা জলন্ত অনল, জ্বালায়ে আগুণ আচি॥
সম্পূর্ণ।
(লেখক-পরিচিতি পাওয়া যায়নি)
৩০৫০)112575
সিাঙও
2121260৬০01 ৬৬. 2752
1172 001 119170 0 ০৯11721.
5৮
[917/৯7 0০1100171৩ 025
সনেট ও এলিজি !
অর্থাৎ
আীতিপুর্ণ ও শোকসুচক কবিতাকলাপ ।
শ্রীপ্যারীচরণ দাস প্রণীত।
হিন্দৃহিতেষিণী সম্পাদকের উৎসাহে
ঢাকা-সুলভযল্ঘে মুদ্রিত।
শ্রীঈশানচন্দ্র শীল শ্রীন্টার দ্বারা প্রকাশিত।
৮ই ভাদ্র সোমবার ১২৭৬ বাঙ্গালা ।
বিনামূল্যে বিতরণীয়।
মহাত্মা উইলিয়ম প্রাইজ সাহেবকে প্রীতি-উশপহার ।
সনেট
উদেছিল নভ্ডোদেশে তপন ল্পন;
সাধি কাজ সায়ক্কালে অন্যত্র গমনে
অস্ত গেল দিনমনি বিধির লিখলে ।
তুমিও ০সরূপ আমি এদুর অঞ্চল,
সাধি কাজ তুমিও হে সূর্যের মতন্ন
অস্ত--চির অস্তমিত হলে গুণিবর!
যাইতে আনন্দদাম শান্তির সদন
যথায় আসীন তব প্রাণের ঈশ্বর ৷
তোমার গুণের গীত কে পারে গাইতে
কারে না তোবিলে তুমি বাঞ্ছিতগ্রদানে £-_
বিদ্যায় বিদ্যার্থিগণে, ভেষজে লীড়িতে,
ধনে দীনে, ভ্ভানদালে অজ্ভানসম্ভানে,
ধন্্স উন্পদেশে সদা ধন্নান্বেষিজনে,
নেরাশ্য-ব্যথিত মর্মে আশার সং্যারে,
বিলা'পীর দীর্ঘশ্বাস প্রবোধকথায় ।
সাধিলে, হে আশাকেন্দ্র-পূর্ণ নেহাসারে,
সেই সব অনুদিন, কল্সদ্রম প্রায়
চতুঙ্গিকে বিতরিয়া কেবল কল্যাণে ।
ছাড়িয়ে পিঞ্জর পাখী আকাশে উভ্ডীন।
৬৮ বাংলা শোককাবা সংগ্রহ __ ৩য় খণ্ড
এলিজি
হায়রে! কে আছে দুঃখ কারে কব আর!
দুঃখিনী শ্রীহট্ট তব কি পোড়া কপাল!
একে একে অস্তগত; তোমার হিতৈষী যত,
অবশেষ বিচার না করি কালাকাল
হৃদয়ের মণি তব হয়ে নিল কাল!
বিসম বিষাদ-ভরে হৃদয় বিদার ?
যে অমূল্যরত্র তুমি হারাইলে আজ,
শতবর্ষ তপ করি, সন্তোষিয়া হরহরি,
পেয়েছিলে; হারাইলে সেই রত্বরাজ
পকর্বতগহনবনে কন্দরের মাঝ ।*
অরে কাল কালামৃখ বিষাক্তদশন!
কি বাদে হরিলে তার এ শ্রেন্ঠজীবন!
উপকারবারিধার, যে সিঞ্চিত অনিবার,
হেন ক্ষীরকৃত্তে কৈলে অন্বল ক্ষেপণ;
জীবন্ত রুধিরে কৈলে বিষ বিসর্পণ।
অরে কাল সবর্বভুক সুতীক্ষদশন!
কি উৎসবে মত্ত তুমি কহ কহ __ অরে!
এত মুণ্ড চিবাইয়া, তৃপ্ত না হইল হিয়া,
মায়া দয়া তেয়াগিয়া গ্রাসিলে তাহারে
জ্ঞানে, ধনে, শ্রমে যেই পরহিত করে।
হে গতজীবন! কোথা করিছ গমন
ফিরিয়া ওদিকে তুমি দেখ একবার!
রাহু গ্রাসে শশী যথা শ্রীহট্ট তোমার
বজ্বাঘাতে স্বর্ণলতা হাদয় বিদার।
* প্রাইজ সাহেব কোন কার্যোপলক্ষে চেরাপ্ঞ্জী পাহাড়ে গিয়াছিলেন, তথায় তাহার মৃত্যু হয়।
সনেট ও এলিজি কর
শুনাযায় কান্দে অই শ্রীহট্র-সন্তান,
সুশীল সন্তান হেই ভাবকবিয়োগে সেই,
পৃবের্বর মতন হয়ে আশু আগুয়ান।
ব্রুশাঞ্কিত ধর্মধবজা তোমার চেষ্টায়
উডভীন হইয়াছিল শ্রীহট্ট অঞ্চলে-__
(আজিকালিকারদিনে); আর কি হে তোমাৰি
বন্ত্রকোষ গত-কতু উড়িবে অনিলে।
বহু কম্মম করিয়াছ মোদের কারণ-_
কি দিয়ে শোধিব ধার নাহি গুণ লেশ;
শ্রীহট্ের বংশ-বেশ্মে, কাছাড়ের কক্ষদেশে,
যথায় যে বব গাব তব শুণাবেষ
কৃতজ্ঞতা-রসে করি ভক্তি সমাবেশ।
হে বিধে! এই কি আসে কলমে তোমার?
আমাদের ভাগফল করিতে লিখন!
এ পাঠ কি নারো আর হতে বিস্মরণ।
দেবতার মন কেন নিষ্ঠুর এমন?
স্বর্গের সমান স্বীয় জনমের স্থল,
বিয়ার ারতারন। মঞ্জুল উদ্যানগণ,
কোকিলকুজিতকুঞ্জ কানন কন্দর
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
প্রেমের প্রতিমা জায়, স্লেহের পৃতুলী
ছোট২ ছেলেদের মধুমাখা-ভাষ
পর উপকার মাত্র সাধনের আশ।
হেন মহাত্মারে বিধে! অযাচিতরূপে
দিয়া পুনঃ হরে নিলে এ কোন বিচার!
না করিতে প্রত্যর্পণ, 77
দেয়াইলে। কেন দিয়া হরিলে আবার।
অহে শ্রীহট্রের সাধু সন্তানসকল
ভেবে দেখ একবার যা হয়েছে তাই
তোমাদের দুঃখে দুঃী, 306১
দ্বিতীয় ধরায় আছে দেখিতে না পাই,
িডিযাহন জার উরাযারির রি
শোক পরিহরি এবে এস সব ভাই
স্বর্ণ পাটিকেলে করি মন্দির স্থাপন
তির প্রকোষ্ঠদেসে, ভক্তি প্রেম সমাশ্রেষে,
একতায়ঃ তুঙ্গচুড়া স্পর্শিবে গগন,
না হবে বিলয় কভু, হলেও মরণ!
তাহার সম্মুখভাগে ইন্দ্র নীলাক্ষরে
শান্তির শীতল-ক্রোড়ে সুখে নিদ্রা যায়।
ছিল গুণি অগ্রগণ্য গুণগরিমায়।
সনেট ও এলিজি ৭১
অস্তমিত সূর্য্য পুনঃ হইবে উদিত,
পুনঃ নভঃ প্রভাতিবে চন্দ্রিকার ভাস,
শীত গ্রীষ্ম আদি ভবে, মাস তিথি বার সবে
পুনঃ২ এসে যাবে বৃথা তার পাশ,
তাহার অনন্তনিদ্রা হইবে কি নাশ!
অথবা, “এশান্তিসঘ্ম সমাধিমন্দিরে
সমাহিত সেই দীনঅনাথসহায়
যাহার পরাণপাখী এখানে পিঞ্জর রাখি,
গিয়াছে আপন দেশে ঈশ্বর আজ্ঞায়
ভবলীলা সাঙ্গি, নাহি আসিবে এথায়।
দীন দরিদ্রের দুঃখ মোচন কারণে,
শ্রীহট্রের হিত-ব্রত সাধন আশায়
এসেছিল সেই জন, হল ব্রত সমাপন,
গেল নিজ নিকেতন, নাম তার হয়
মাননীয় “উইলিয়ম প্রাইজ” মহোদয় ॥"
সম্পূর্ণ।
(লেখক-পরিচিতি পাওয়া যায়ালি।
্বিকর্বাপী ও্াছীশ্প
শ্রীহরচন্দ্র নিয়োগী কর্তৃক বিরচিত।
'তিতীর্ষপুস্তরং মহাদুড়পে নাস্মি সাগরম্”
_- কালিদাস।
মেটিয়াব্রজ ধোবাপাড়া হইতে
শ্রীন্দগোপাল নিয়োগী কর্তৃক প্রকাশিত।
কলিকাতা
১৮নং টালা মেট্রোপলিট্যান প্রেসে
শ্রীভিখারী দাস বৈরাগী দ্বারা মুদ্রিত
১২৯৩ সাল ।
উহ্হ্নর্শ
অগ্রজ সহোদর ।
শীযুত্ত বাবু নন্দগোাল নিয়োগী
অহাশয়ের
এই গ্রন্ছ
সামান্য হইলেও
ভ্রাতৃভভ্তিনর চিহু স্বরূশ্প
উৎসর্গ করিলাম ।
নির্বাণ প্রদীপ
১
নবমীর নিশা প্রভাত হইল
জাগিল জগৎ নেয়ে নব প্রাণ
রঞ্জিয়া পুরব তপন উদিল
গায় পাশীগণ সুমধুর গান।
৯
হাসিল চামেলি হাসিল েফালি
হাসিল নলিনী নিিরযমল জলে,
সুমধুর রবে গুঞ্জরিয়া অনিল
উঠে বসে সুখে নানাজাত্ি ফুলে ।
৯,
সুমন্দ প্রবাহে বহিছে সমীর
টুপ টুপ করি পড়িছে শিশির
যেন তরুবরাজী প্রেম অশ্রু হেলে ।
৪
ভান্র কিরণ হৃদয় মাখিয়া
কলকলে চলে স্রোতনিনী জল;
মরি কি সুন্দর --_ হরষে মাতিয়া
খেলিছে €স নীরে জলচর দল!
৫
সাজিজ প্রকৃতি কত সুসময়ে
এ হেন সুদিলে বাঙ্গালী নিকর
কেন রে রহিল অচেতন প্রায়?
৭৮
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ ৩য় খও
৯৬
এ কি? - কেন হেন ভাব বাঙ্গালীর
নিরখিরে আজি বুঝিতে না পারি,
কে দিবে উত্তর কেন বাঙ্গালীর
নিস্পন্দ নিসাড় যত নরনারী?
৭.
উঠ বঙ্গবাসী! মেল হে নয়ন
দেখহ প্রকৃতি মানস রঙ্জিনী,
থাকিও না আর ঘুমে অচেতন
এযে হে দিবস -- নহেক যামিনী,
০
কই উঠিলে না __ খুলিলে না আঁখি?
কিসের বিষাদ -- কেন হেন দেখি?
কেন অশ্রজলে ভাসিতেছ হায়!
৮৯
কি ধনে হারায়ে পাগলের প্রায়
ছাড়ি দীর্ঘশ্বাস করিছ রোদন£
জানি কি ধনে বহুদিন হায়!
হারায়েছ চিরদিনের মতন ।
১৫০১
সে ধন কারণে এ হেন বিষাদ
দেখি নাই কভু একদিন তার,
তবে কেন আজি শুনি অকস্মাৎ,
বিষাদের ধ্বনি প্রতি ঘরে ঘরে?
১১
নহে বহুকাল এক নিশি আগে
কত হযে হাসিলে প্লকভাবে,
এখনো ০স সুখ হৃদয়েতে জাগে
তবে কেন অশ্র নয়নেতে ঝরে?
নিবর্বাণ প্রদীপ দি
১২
কোথা সে উৎসাহ আনন্দ কোথায়
কোথা এবে সেই গীত বাদ্য রব?
সে "জয়" নিনাদ গেল রে কোথায়
কেন নাহি বাজে শস্মা ঘন্টা সব?
১৩
সেই আর্ধ্দ্ধারে একদিন হায়!
দুর হতে আসি নিযুত যোজন-_
নৃপতি সমাজ প্রসাদ ভিক্ষায়
করিত রে করপুটে অবস্থান ।
১৪
যার রণ দক্ষ বিংশ অক্ষৌহিনী
বীরদাপে কেপেছিল একদিন,
টল টল কবি সমস্ত অবনী;
এবে সেই জাতি ল্লেচ্ছ পরাধীন!
১৫
সেই আর্কুলে লভিয়া জনম
ল্লেচ্ছ পদাঘাত সহিছে যে কত,
কত শেল হৃদে বিধেছে বিষম
কত আশালতা হইয়াছে হত।
১৬
কহ যে মরম-বিদারী বেদনা
সহিছে বাঙ্গালী না হয় গণনা
কিন্তু হেন দুঃখ দেখি নাই আর।
১৭
কেন হেন দুঃখ বৃঝি না কারণ-__
বুঝেছি বুঝেছি এবার ।
কেন বাঙ্গালীর হৃদি প্রস্রবণ
উৎসারিছে দুঃখ বারি আনিবার।
চা ০
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
১৮
আজি রে বঙ্গের বিজয়া দশমী
শক্তি শান্তি আজি হবে বিসর্ভন!
গেছে চলি সুখ-অষ্টমী নবমী
বঙ্গ গরিমার আজি বিসর্জন ।
১৯
শকতি শান্তির সৌন্দর্য্য প্রতিমা
স্েহের প্রেমের স্বাধীনতা ধন,
হায়! হায়! আজি হবে বিসঙ্্ভন!!!
স্২০
গত নিশাশেষে নিবেছে যে দীপ
বঙ্গ গৃহ যার হয়েছে আধার,
কে আর জ্বালিবে “নিবর্বাণ প্রদীন্প”
আঁধারে আলোক জ্ুলিবে না আর।
২১
বাল বৃদ্ধ যুবা ধনী দীন আদি,
যে মায়ের পদ করি নিরীক্ষণ,
ভেসেছিল সুখে সে উৎসবে মাতি
আজি সেই মার হবে ভ্জন্ন!
২২
তাই রে বাঙ্গালী উত্থান রহিত
তাই বঙ্গবাসী শোকে মৃচ্ছাগত
বাঙ্গালী নিকর তাই বিষাদিত
তাই আলোহীন বঙ্গগৃহ যত।
২৩
মাতি সেই মহাশক্তি আরাধনে
ভেসেছিল সুখে বঙ্গবাসীগণ,
কিন্তু আজি সেই দেবী বিসর্্জনে
কেন রে এতেক নিরুৎসাহ মন?
নিবর্বাণ প্রদীপ হি
২৪
এখনো বাঙালী ধমনী ভিতর
হইছে বহিত আর্যের শোণিত
এখনো সে রক্তে বাঙালী অন্তর.
অস্থি মজ্জা, পেশী হইছে শোবষিত।
২৫
যদিও রে হায়! বিদেশী ঘৃণিত
বিজেতা শাসন লেচ্ছের 'শীড়নে,
হয়েছে শীতল সে আর্যশোণিত
তবুও স স্মৃতি জাগিতেছে মনে।
২৬
সত্য ভ্রেতা যদি 0৩3) গিয়াছে চলিয়া
দ্বাপর মিলেছে অতীত সাগরে
কিন্তু সেই স্মৃতি যায়নি মুছিয়া
এখনো জাগিছে বাঙালী অন্তরে ।
২৭
ছাড়িয়া কখনো যাইবে না চলি
সেই. সুখ স্মৃতি বাঙালীর মন।
২৮
নাহি রামচন্দ্র নাহি সে রাবণ
মেঘনাদ বীর নাহিরে এক্ষণে
যাদের বীরত্বে গীতি রামায়ণ
করিছে বিরাজ ভারত ভবনে।
২৯
হায়রে! কোথায় ভীক্ম মহাবল ?
কোথা বা রহিল সে পাণও্বগণ?
অভিমন্যু বীর কোথা আছে বল?
ধৃষ্ট্যদু্ন কই পাধ্চালনন্দনঃ
৮২
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ ৩য় খণ্ড
৩০
কোথা দুর্যোধন কোথা দুঃশাসন,
কৃপ কর্ণ দ্রোণ রহিল কোথায়?
কোথা জরাসন্ধ মগধ রাজন!
সুধন্বা বিরাট কোথায় রে হায়!
৩১
কোথায় দ্বাদশ ববীয় বাদল
কোথায় রে হায়! রাজপুতগণ.
যাদের বীরত্বে যবন সকল
শৃগালের মত করে পলায়ন।
৩২২
কোথায় বিক্রম আদিত্য রাজন
কোথা চন্দ্রণ্ুপ্ত অশোক কোথায়?
মহারাষ্ত্র পতি শিবাজী এখন
কোথা সবে চলি গিয়াছে রে হায়!
৩৩)
কোথা দুর্গাবতী পদ্মিনী বিদুলা
কোথা জহবর কোথা লক্ষীবাই?
বিজয়া ঝিন্দন রাণী, বীরবালা
সে স্বর্ণ কুস্তলা তারাবাই নাই।
৩৪
নাহি সে সকল বীরেন্দর কেশরী
এবে নাহি সেই বীরাঙ্গনাগণ,
আছরে কেবল সে স্মৃতি এখন।
৩৫
পুজি দশভুজা অকাল বোধনে।
উদ্ধারিল সীতা সানন্দ অন্তরে
সবংশে বিনাশ করিয়া রাবণে।
নিকর্বাণ প্রদীপ ই
৩৬৩
এবে সেইল রূপ হইল বোধন
সেই শক্তি পূজা হইল সকল
কিন্তু হল কৈ বঙ্গবাসীগণ।
সেই কার্য্য সেই উদ্দেশ্য সফল ।
৩৭
সেই ত ভারত চির বাস পরি
বিষাদে কাদিছে হানি শিরে কর।
সেই ত যবন বল দর্প করি
বিচরিছে মার জীর্ণ বক্ষপর।
৩৮
নাহি সেই দিন সে রাম লম্ক্বণ
সে অঙ্গদ আদি বীর গণ নাই
লম্ষ্মীর উদ্ধার হইল না তাই।
৩৯
তাই বঙ্গবাসী ভগন হৃদয়
উদ্যম রহিত নর নারি যে
তাই শোকোচ্ছাস প্রতি ঘরে ঘরে।
৪০
ভাই বঙ্গবাসী! কাদিও না আর
স্মৃতির বিলোপ করো না কখন-_
হইল না বলি কার্য্যের উদ্ধার
রেখো চির লঙ্কা সমর স্মরণ ।
৪১
আটশত বর্ষ হইল বিগত
নিশ্চয় জননী দুঃখিনী ভারত
আনন্দে হাসিবে পুনঃ একদিন।
৮৪
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ ৩য় খণ্ড
৪২
আজিও বাঙালী তোমাদের হায়!
শকতি পূজনে কিছু অধিকার,
জন্য নাই বলি হইল না হায়!
আরাধনা শেষে লক্ষ্মীর উদ্ধার ।
৪৩
যবে বাঙালীর শকতি পূজায়
হবে অধিকার নিশ্চয় তখন,
হিমাদ্রি হইতে সে কুমারিকায়
'জয় জয়' নাদে ছাইবে গগন।
8৪
দেখিবে তখন ভারত গগনে
হবে সমুদিত স্বাধীনতা রবি,
অধিনতা তম£ বিনাশি কিরণে
দেখাইবে নরে মনোহর ছবি।
৪৫
'স্বাধীনতা জয়" বাজিবে বাজনা
বলিবে চিৎকারি যত বঙ্গজনা
“জয় স্বাধীনতা - ভারতের জয়”
৪৬
বঙ্গ গৃহ সব হয়েছে আধার
নবমীর শেষে নিবিয়া যে দীপ,
হৃত ধন পুনঃ পাইবে আবার
জ্লিবে নিশ্চয় “নিবর্বাণ-প্রদীপ” |
সম্পর্ণ।
(লেখক-পরিচিতি পাওয়া যায়নি)
শীতমাহিনী ০মাহন বসু
গ্লীতি
শ্ীদিগিন্ত্র মোহন ঘোষ কর্তৃক
ভ্বিতীয় সবংক্ষবণ
৯৩০৩০০৫ সন্ব।
মুল্য চাত্বি আনা মাত্র ।
ভূমিকা
আজ অষ্টাদশ বৎসর হইল জগতের মুখ দেখিয়াছি। এই অষ্টাদশ বৎসরের
মধ্যে, যষ্টবর্ষ পর্যন্ত স্নেহময়ী, মূর্তিমতী দয়াশীলা জননীর স্সেহময় ক্রোড়েই
লালিত, পালিত এবং বর্ধিত হইয়া ছিলাম। ভগবানের শুভ ইচ্ছা অপূর্ণ থাকিবার
নহে। মঙ্গল নিলয়, পরম করুণাধার বিশ্বনিয়ন্তা পরমেশ্বর, জানি না কি
মঙ্গলাভিপ্রায় সিদ্ধির জন্য, অসময়ে আমাকে মাতৃহারা করিয়াছেন। আজ আমি
মাতৃহীন। মাতার স্বর্গীয় স্সেহ, অপার্থিব করুণা, নিঃস্বার্থ সদাচরণ এবং
শ্রবণানন্দকারী, সুখশান্তিপূর্ণ ন্নেহমাখা মধুর বচন কি সুখপ্রদ জিনিষ, মূর্তিমতী
দেবী প্রতিমা জননীর জীবিতাস্থায় তাহা বুঝিতে পারি নাই। হয়তো তা বুঝিবার
কোন শক্তিও ছিলনা। এখন বুঝিতে পারিয়াছি বলিয়াই অশ্রু আমার প্রধান সম্বল
হইয়াছে। হৃদয়বিদারক মাতৃ-বিয়োগ জনিত শোকাশ্রুর একবিন্দু লইয়া সহদয়
পাঠক সমীপে উপস্থিত করিলাম। এই অশ্রু সন্দর্শনে আপনাদের একজনেরও
যদি বিন্দু অশ্রু পতিত হয় তবে -আমার শ্রম সফল জ্ঞান করিব।
২লা জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৫. শ্রী মোহিনী মোহন বসু।
বারদী।
দ্বিতীয় বারের বিজ্ঞাপন।
প্রথম সংস্করণের সমস্ত পুস্তক নিঃশেষিত হওয়াতে 'অশ্রু দ্বিতীয়বার
প্রকাশিত হইল। উপন্যাস-প্লাবিত দেশে এত অন্ধকার মধ্যে অশ্রু যে
সব্র্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হইয়াছে তজ্জন্য আমরা অত্যন্ত প্রীত হইয়াছি।
কতিপয় এন্ট্েন্স স্কুলের সুযোগ্য হেডমান্টার মহোদয়গণ ইহাকে স্ব স্ব স্কুলে
পাঠ্যরূপে নিব্বাচিত করিয়া আমাদিগকে চিরকৃতজ্ঞতা পাশে বদ্ধ করিয়াছেন।
প্রথমবারের ভ্রম প্রমাদ যথাসাধ্য সংশোধন করা হইল।
১লা ফাল্গুন, ১৩০৫। শ্রী দিগিন্দ্র মোহন ঘোষ।
উৎসর্গ
কপোল পতিত অশ্রু সলিল মুকুর
হৃদয়ের অন্দর্দেশে
হেরিত যে অনায়াসে,
মম ক্ষুদ্র উপহার,
রতন অধিক জ্ঞান, রাখিত সাদরে;
তাহাকে উদ্দেশ করি
এই এক ফোটা বারি
করিনু উৎসর্গ আজি অতি ভক্তিভরে
মোহিনী মোহন বসু।
স্ব সক
পৃকর্বস্থৃতি
তেন আজি- প্ৃকর্বস্মৃত্তি উঠিল জাগিয়া
ভ্াসাইয়া বক্ষ স্থল
০ বহে অশ্রুজল
০-োকানলে কেন চিস্ত হযেতেছে পড়িয়া?
কেন শৈশবের কথা কাল আবর্তলে
বিস্যৃতি জলধিজলে
ছিল আখি অন্তরালে
অকস্মাৎ পুনঃ মোর উদিল স্মরণে?
অতো শেশবের কালে যবে মা আমার
ত্যজ্ধি আয়া ত্যতজ্সি মোহ,
ভুলিনি দয়া ভূলি সহঃ
অসার সংসারে দিলা সহজে ধিক্কারঃ-_
মা মোর নিকুরা হয়ে
অভাবের একা থু'য়ে
যাহবে যাইতে পারে, ছিডি ০সহডোর!
ক্ষমতার চরে গেলে
ভানসিতিৈ হযে অশ্রুুজ লে
হইতরে মণিহারা ফণিনীর প্রায়!
নিকটে আগলে কত ঠান্থিত বদলে,
ক্রণোাড়েতে লইত তৃুল্লি
সব কাজ €যত ভূক,
দর দর আনন্দাশ্রুঃ করিত নয়ত!
৯১০২
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
নয়নে বহিলে জল,
মুছাত মা ০ সকল
পীযূষ মধুরহ্ধরে তুষি বার বার।
ভাবে নাই একবার
ন্যায়ান্যায় তাস বার,
অশেষ উপায়ে তুষ্ট করেছে জননী ।
অঞ্চলে অঞ্চলে সদা রয়েছি তাহার
দিয়াছি যে যত কষ্ট
কত যে করেছি নস্ট
তবু তো হয়নি কভু ক্রোডের সঞ্চার ।
কভু বা সে পুত অঙ্গে করেছি প্রহার
রোষিতে দংশন কত
করিয়াছি শত শত
হয় নাই তবু তার চিত্তের বিকার ।
জনকে ভেবেছি হায় শমন সমান;
যাই নাই তার পাশে
কভু কোন দ্রব্য আশে,
সকল অভাব মাতো করেছে পূরণ!
তাহার উপর ছিল শ্রভুত্ব আমার
ধন জন বল গক্্ব
সেই মোর ছিল সবর্ব
তারি বলে ছিল মোর বিক্রম অন্পার।
পাড়ার বালক সলে ঝগড়া করিয়া
অক্ক দুর্গ অভ্যন্তরে
পশিতাম হাস্টীম্তরে
দুর্ভেদ্য ভাবিয়া সবে যাইত চলিয়া।
অশ্রু
বুঝা ত মধুর স্বরে, করিলে অন্যায়
সে মিন্টু ভণ্ুসনা শুনি
হইতাম অভিমানী,
বহিত নয়নে জল নির্ঝরের শ্রায়।
সংস্থাপিয়ে বক্ষোপরে,
চন্বিতেন বারে বারে
উষ্ণ অশ্রু বিন্দুসিক্ত কপোলে আমার ।
সাজাতেন মা আমারে ফুলদল দিয়া
করি অতি পরিপাটী
মস্তকে বাধিত ঝুটি
নাচিতাম গাইতাম হরষে মাতিয়া।
হাসিতেন কত তিনি সে নৃত্য হেরিয়া
রাখিতেন বুকে মোরে
শোণিত প্রবল বেগে উঠিত নাচিয়া।
নীল নভেঃ শশাঙ্কেরে হেরি কত দিন
বলেছেন সেহভরে,
মম মন মোহিবারে
অপরূপ কান্তি তার করিতে দর্শন।
লভেছি ক্ষণিক সুখ,
পুনঃ হেরি মার মুখ
ভুলেছি তাহার কথা হরষে তখনে।
তাহার বদলে ছিল সম্পূর্ণতা ভাব;
দিয়াছিনু চন্দ্রমায়
নীচাসন তুলনায়,
কি জানি তাহাতে. ছিল কিসের অভাব।
৯৪
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
শশাঙ্কাংশু নহে তার আঁখিজ্যোতি তুল
হাদে শান্তি প্রদানিতে
ছিল তো অক্ষম তাতে
সে শক্তি নয়নে তার ছিল তো প্রতুল।
চাদেতো কলঙ্ক আছে নহে নিরমল
চাকা যেন আভছায়
ভাল শোভা নাহি পায়.
কিন্তু তার মুখশশী সবর্বদা উজ্ভ্বল।
কৃষ্ণজলধর প্রায় ছিল কেশদাম
সুধাংশু সে শোভা তেরি ছিল ঈর্ষান্বিত
জলদে বদন ঢাকি
বারেক সে শোভা দেখি
সরমে পাও্ুর মুখে হত প্রতিভাত।
সেই শোভা ভাল কিন্তু লাগেনি আমার.
এক এক এক কবি
হেরিতাম মেঘোমুক্ত মুখচন্দ্র তার।
চন্িত কপোলে মোর শত শত বারঃ
হইতাম আত্মহারা
হাদয়েতে স্ধাধারা,
বহিত প্রবল বেগে আমার, তাহার ।
সেই ভাবহীন আমি কি সাধ্য আমার
কহিব তা প্রকাশিয়া
জানে প্রাণ জালে হিয়া,
বুঝি বুঝি সব বুঝি বুঝি না আবার।
অশ্রু টি
মস্তকের একাদশে
সদা রয়েছেন বসে
বিমর্ষ মলিন মুখ কাতর চিন্তায়।
কখনো বা করজোড়ে, অশ্রু জলে ভাসি,
মোর স্বাস্থ্য লাভ আশে
নেচেছেন ঈশপাশে
অনাহারে অনিদ্রায় কাটি দিবানিশি ।
ভুলিত সংসার কথা,
ভুলিত শ্রমের ব্যথা,
রহিত নিকটে, যেন আমারই ছায়া ।
কতদিন তার মনে দিয়াছি যে তাপ
তবু তো মা মিশ্লব্বরে
বলিতেন ধীরে ধীরে
“বেচে থাক, বেচে থাক অভাণিয়া বাপ!;
“ন্সেহময়ী মা আমার কোথা রলে হায়
ফেলিয়া অভাগা সুতে
অসহায় এ জগতে
প্রবল সংসার স্রোতে কে রক্ষে আমায়।
করিয়াছি শিশুকালে কত অত্যাচার
তাই কি রোষের বশে
গেলে তৃমি পরদেশে!
কভুতো হেরিনি হেন কঠোর আচার!
সন্তানের অপরাধ যাও সব ভুলে
মুছাও নয়নবারি,
দুহাত প্রসারি মাগো লও কোলে তুলে!
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
ডাক মা মধুর স্বরে 'বাছাধন” বলি
অবাধ্য হব না আর
পণ মোর এইবার,
তোমার বিচ্ছেদানলে মরিতেছি জ্বলি!
ভাবি নাই একবারো হবে সে পাষাণী
তব চিত্ত স্েহময়
হবে এত নিরদয়
আমার শৈশবজ্ঞানে জানিনি জননি£
চিরদিন আমি তব, তুমি মা আমার
ছিল মোর এই জ্ঞান;
ভাবি নাই এর আন,
হেরি নাই ভাল করে মুখানি তোমার ।
আগে যদি জানিতাম ত্যজিবে আমায়
হেরিতাম ইন্দুনিভ মুখখানি হায়!
শৈশবের ভালবাসা ভুলিলে কেমনে
শয়নে স্ষপনে যারে
রাখিতে মা ধারে ধারে,
কেমনে জনমতরে ত্যজিলে এখনে?
লয়েছ তখনি কোলে,
সান্তনিয়া মিষ্টবোলে,
আজ কেন হলে মাগো এমন নিদয়াঃ
ডাকি যে কতই মাগো নাহি দেও সারা;
কোথায় গিয়াছ তুমি
কাব পাশে রাখি মোরে হল্লে আত্মহারা ।
অশ্রু ১৯০২
যথায় থাক মা এস বারেকের তরে
তোমা না রাখিব ধরে
চাহিনা অধিক আর তোমার গোচরে।
মৃত্যু শয্যায়
সীড়ার শয্যার কথা আছো পড়ে মনে
হেরেছিনু সে শয়ন,
ভাবি নাই কদাচন,
সে শয়ন চিরতরে রাখিবে শয়নে!
যখন কাতর হলে শুইলে শয্যায়
কহিলে আমায় ডাকি
শির'পরে কর রাখি,
“ভয় নাই কিছু বাছা উঠিব ত্বরায়।
যেওনা অন্যত্র তৃমি রহ মোর পাশে,
জুড়াবে হাদয় নো
রোগতাপ যাবে দূরে তোর মিশ্টভাষে |"
আমি রে অভাগা কিন্তু বুঝিনি সে কালে.
রহি নাই তব পাশে
ক্ষণ সুখখ লাভ আশে
গিয়াছি যথেচ্ছা, তব কথা অবহেলে।
হায় মা, তোমাকে কত করেছি “সীড়ন,
তোমার কাতর বুকে
ঝাপায়ে পড়েছি সুখে,
তোমার কন্টের কথা ভাবিনি কখন।
আত্ম সুখ নীরে সদা ছিনু নিমগণ,
ভাবি নাই কারো তরে,
কারো দুঃখ এ সংসারে
অজ্ঞানতা স্তরে স্তরে ছিল গো তখন।
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খও
ক্রীড়ান্তে যখন গৃহে করেছি প্রবেশ
তখনি তো অশ্রুজলে
পরিপ্লুত গন্ভব্যস্থলে
হেরেছি মা, মমতরে সহিয়াছ ক্রেশ।
চাহিতে বদন পানে,
জুড়াতে মা তব প্রাণে,
ভুলিতে অসহ্য তব 'ীড়ার আয়াস।
তবশীর্ণ দেহ হেরি চোখে এলে জল,
আপন অঞ্চল দিয়া
দিতে তাহা মুছাইয়া,
প্রবোধ বচনে দিতে মোর দেহে বল।
বিশ্বাস করেছি তাহা, ভুলেছি সকল,
কোলে নিবে মা আমারে,
থাকুক দূদিন শুয়ে কিবা ক্ষতি বল!
তাই মাগো কথা তোর
ভুলেছি, গিয়েছি ছেড়ে যথা ইচ্ছা হয়।
যদি জানিতাম মাগো ছেড়ে যাবে তুমি,
তা হলে কি তোমা ছেড়ে
যাইতাম স্থানান্তরে?
বুকেতে রাখিয়া মুখ থাকিতাম আমি ।
দিন দিন যত তুমি হইলে কাতর,
(আমি তো বুঝিনি হায়
ঢাকা ছিনু অজ্ঞতায়)
ততই হইল তব বিষন্ন অন্তর ।
অশ্রু টি
বুঝেছিলে সন তুমি অন্তরে অন্তরে,
তাই ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে.
বলিয়াছ কত মোরে
থাকিতে নিকটে তব শয্যায় উপরে ।
কি কহিতে ধীরে ধীরে,
বুঝি নাই ভাল করে,
চাহিতাম মুখপানে বিস্মিত অন্তরে ।
হেরেছি চৌদিকে যত আত্মীর-স্ষজন,
কাহারো নয়নে জল
সুদীর্ঘ নিশ্বাস কেহ ত্যজিছে কখন।
বৃঝি নাই কভু মাগো কারণ ইহার
দেখিনি যতন করে,
তোমা বিন। চিল্লা মোর নাহি ছিল আর।
সেই মরণের কালে ডেকেছিনে। মাবে
কোথা মোর বাছা কই,
চলিলাম আমি হায় জনমের তরে।
আবার কহিলে তুমি ভাঙ্গা ভাঙ্গা বনে,
বাবা, এই শেষ কথা
আমিও কাদিনু হায়, না বুঝি অন্তরে।
চলে গেল অন্য স্থানে,
ভাবিলাম মলে মনে
যাইব মায়ের পাশে খানিক পরেতে।
৬০০
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
সেই দেখা হায় মোর হল শের দেখা;
না হেরিনু একবার
০সদিন হইতে ভবে হইয়াছি একা।
সেদিন হইতে তব সুধামাখা স্বর
পশে না শ্রবণে মম
তষিত চাতক সম
নিদাঘে মেঘান্বু বিনা, অতৃপ্ত অন্তর ।
সকলি রয়েছে গৃহে সুধু নাই তুমি
জিজ্ঞাসি আত্মীয়গণে
“মা আমার কোন স্থানে,
সবে অশ্রজলে ভাবে বুঝি নাই আমি।
সহচরগণে কত করেছি জিজ্ঞাসা,
“বলিতে কি পার সবে
মা মোর আসিবে কবে'
প্রবোধ বচনে তারা দিত মোরে আশা ।
দিন দিন প্রতিদিন কতই আদর
আমার আব্দার যত
পালে সবে সাধ্যমত,
ভুলায় বিবিধ রূপে আমার অন্তর ।
কিন্তু মা শয়নকালে না হেরি তোমায়,
সারে নাই সান্তনিতে কভুতো আমায় ।
লয়েছি বিশ্রাম যবে
ভুলেছি তোমায় তবে:
হায় মা কোথায় গেলে, ফেলে অভাগারে ।
অশ্রু জিডি
সেই তো সকলি আছে, পৃবেক্র মতন
তেমতি তো ফোটে ফুল
তেমতি তো বিহঙ্গ কল
মধুর সঙ্গীতে আজো মাতায় ভূবন।
তুষিছে শরীর মন
ভৃত্য ভাবে অনুক্ষণ,
তেমতি তটিনী বহে কুল কুল স্বরে।
তেমতি তো ওঠে চাদ গগনমণ্ডলে,
সঙ্গে কোটী সহচর
প্রকাশে বিমল কর
তেমতি তো নাচে শশী তরঙ্গিনী কোলে ।
তেমতি তো খতুগণ আসিছে পর্য্যায়
একটার সমুন্নতি,
তেমতি তো ভাক্ষকরের হয় অস্তরোদয়।
সকলি তো যায় আসে এ মহীমণ্ডলে
তুমি যে গো গিয়াছ মা
আন্ন কি গো আসিবে না?
কিরিপে রহিলে বল মোরে হেথা ফেলে
সদা মাগো শুন্য হৃদি উদাস পরানে,
কর রাখি বক্ষঃস্থলে,
ভাসিয়ে মা অশ্রুজলে,.
নিরাশ হৃদয়ে চাই আকাশের পানে।
অতুল অনন্ত সেই শূন্য ভর্গস্থান,
কেবল নীলিমাময়,
কিছু নাহি দৃষ্ট হয়,
তোমার মুরতি নাহি হেরি বিদ্যমান ।
১০
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -_ ৩য় খণ্ড
নিশীথে তারকা মাঝে খুঁজেছি তোমায়
তোমার বিমল কান্তি
নক্ষত্রে হয়েছে ভ্রান্তি
নৈরাশ্যে ডুবিয়া আজি না পেয়ে তথায়।
অকুল চিন্তার স্রোতে নাহি পাই কুল
করি সেই তৃণাশ্রম
“ক করিব. কি হইবে ভাবিয়া আকুল ।
মন্কান্তিক যাতনা মা সহেনা সহেনা,
শত আশীবিব যদিং
দংশিত মা নিরবধি
তথাশপি কখন মাগো এ কন্ত্র হত না।
আরা *্ুব না দেখা অভাগা সন্তানে,
আর কহিবে না কথা,
বুঝিবঝে না মনোব
আর কি নিবে না কোলে তুষিতে চুধনেঃ
হায় কি ও মুখশশী হেরিবনা আর,
কে নিল কে নিল হরি
তোমারে মা ছিন্ন করি.
এহা ক বিধান মাগো শমন রাজার?
যমের প্রতি
অরে রে নিম্মম যম কেবা তোতে সৃজিলঃ
কেমনে জননী মোর
হরিলি পাষণ্ড চোর,
সে পৃত মূরতি হেরি দয়া কিরে নহিল?
এমন পাষাণ হতে কেরে তোরে শিখাল?
অশ্রু ১০৩
পাষাণ তো তোর মত হেরি নাই পাষাণ,
দ্রবীভূতা বেগবতী
সুতা তার স্রোতস্বতী.
কোমলতা পরাকাষ্ঠা দেখায়েছে সেজন;
পর তরে তারো সদা বারিতেছে নয়ন।
অভাগা সম্ভান আমি না চিনিতে জননী,
না চিনিতে আত্মন্পরে
কাদায় রেখেছ হায় দুঃখপূর্ণ অবনী
কোন আশে এ নিরাশে রে কঠোর পরানি?
স্সেহময়ী মাতো মোরে কভু ভুলে রতনা।
ক্ষণেক অদৃশ্য হলে
ভাসিত মা অশ্রুজলে
অভাগার তরে পেত কত শত যাতনা
তারে অন্ত্ররাল করি দিলি কেন লাঞ্ছনা?
অপোগণ্ড শিশু হেরি দয়া কিরে হল নাগ
কি প্রকারে হেন শিশু
বাচিবেরে দেব পশু
মা বিনা যে শিশু কভু আর কারে জানে না,
কঠোর হৃদয় তোর কিছুতে যে গলে না।
ধন্মরাজ বলি তোরে কেন সবে ডাকেরে?
এরূপে কি সাধ ধরন
এই কি সাধুর কর্ম
দস্যুরাজ অভিধান ভাল তোরে সাজেরে।
সেও ভাল তোর চেয়ে শত শত গুণেরে।
আমি তো অজ্ঞান ছিনু পাপ কিছু জানিনি,
যদি করে থাকি পাপ
তাতে ও তো আছে শা,
সে পাপে ধরিতে নার কভু মোর জননী।
তবে কেন অভাগারে কাদালিরে এমনি?
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খও
তোর তো হৃদয় আছে বুঝ নাকি যাত না?
না, না তাহা মিথ্যা কথা,
তা হলে বুঝিতি ব্যথা,
আমারে কাদাতে তোর কভু সুখ হত না।
হায় রে মরণ কেন আগে মোর হল না!
সংসার সরেতে যেই সরোজিনী আছিল,
নাশিয়া সুষমা তার
লাঘবিতে কোন ভার,
অকালুল তুলিয়া নিলি ছিড়িয়ারে মৃণাল!
কি আশেরে তোর মনে হেন ভাব উদিল?
মম সুখাস্বরে সেই উদভাসি উদদিল,
স্নেহ পবিত্রতা করে
পূরেছিল গগনেরে,
অসময়ে কেন তার জীবতারা খসিলঃ;
হায়রে এতে কি তো সদাচার ফলিল!
সোনার সংসার নাশে কি আনন্দ লভিলি!
কাদিছে সকলে যার
কেন হর্ষ তোর তায়
ইহাতে কি দিবভাব জনগণে দেখালি?
দেবভাবে হেরি হায় কলঙ্কতো কেবলি!
চিরদিন ছিনু আমি ডুবে সুখ সাগরে
ভাবি নাই একবার
সে সুখ বাছিয়াছিল বুঝি তোর চোখেরেঃ
সুখের কমলে তুই ক্রেশপ্রদ কাটারে!
সাগরের কূল আছে আছে তার তলার
সীমাবদ্ধ সমীরণ
চন্দ্র সূর্য্য প্রহগণ
কিন্তু তোর কাঠিন্যের সীমা কোথা বলরে?
চারিদিকে সদা তোর কঠোরতা হেরিরে।
অশ্রু ই
অমর চরিত্র তোর এত যদি দুষিত,
রেখেছিস অভাগারে
নিঠুরাভিলাব, কেন সাধনারে ত্বরিত,
যে চাহে তোমায়, তারে নিতে কেন কুষিত?
আর তো রে এ বিচ্ছেদে সহেনারে সহেনা!
হয়েছি পাগল প্রায়,
কাহারো বাক্যেতে মোর মনতো রে মানে না?
নদী স্রোত বালিবাধে কভু তোরে বাধে নাঃ
হাধিক! শমন তোরে বৃথা আমি দুবিরে
পৃবর্জন্মকৃত পাপ
দিল মোরে হেন তাপ
জানি না কতই পাপ করেছিনু আজিরেঃ
তাতেই হারানু হায় স্েহময়ী মায়েরে।
শ্বশান সন্দর্শনে
এই কি সেই: স্থান শুয়েছ মা যেখানে?
ত্যজিয়া পার্থিব কায়া
ভুলিয়া সংসার মায়া
কঠোর পরানী হলে বল কোন কারণে
সংসারের চেয়ে কি গো বেশী শান্তি শশানে?
সুবুশ্তি ভাঙ্গে না তায়
এর চেয়ে বেশী কি গো কোলাহল সংসারে,
তাতেই ত্যজিলে ইহা উপেক্ষিয়া সবারে?
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _- ৩য় খণ্ড
শিবার কর্কশনাদ পশে না কি শ্রবণে?
বীণার সুতার তার
হতে কি গো ভাল তার?
রোধিয়াছ শ্রতযুগ জন্বুকের নিস্বনে।
শ্মশান ভীষণ স্থান প্রাণ কাপে শুনিলে,
জগতের শুর যাঁরা
নামে ভয়ে কাপে তারা
কি সাহসে জননি গো হেন স্থানে রহিলে?
কার সনে অভিমানে হেন কাজ করিলে?
মোরেতো বাসিতে ভাল অকপট হৃদয়ে
অভিমানে মোরে ভুলি
ত্বরা তুমি যাবে চলি
কে চিন্তিবে হেন কথা একবারো ভুলিয়ে!
যাবে যদি তিতে মোরে বাহুপাশে বাধিয়ে ।
আরণ্য তুলসী তরু আছে তোমা ঘেরিয়া
হৃর্দে অতি শান্তি পেয়ে
অন্যত্র শান্তির তরে যায় নাই চলিয়া।
অহোরাত্র হেরে তোমা আঁখিযুগ ভরিয়া ।
অমন কোমল মলে কঠিনতা কে দিল!
কে হেন পাষণ্ড হল
শ্বুশান কি হেন ভাবে নিঠুরতা শিখাল?
এ নহে সম্ভব কভু কে গো হেন করিল?
শ্বাশানলে যে যায় তার শোকতাপ রহেনা,
যায় তার পাপ ভয়,
সুখেতে মগন হয়,
ধনী কি দরিদ্রে তার জানি সমবেদনা
আমার কি রে শ্বশান দুঃখ দূর হবে না?
অশ্রু ভি
সাগর ভামিনী সতী ধীরে ধীরে বহিয়া
প্রক্ষালিছে ও চরণ
ভক্তিভাবে অনুক্ষণ
হয়েছে সফলকাম ০ তোমারে পূজিয়া!
আমি ও তো রে শ্মশান তব পাশে বসিয়া
অতীব কাতর চিতে
তোমার প্রসাদ মেতে
অশ্রজল সদা হায় অঞ্জলিতে ভবিয়া
প্রক্ষালিছি বক্ষ£ তব অভিলাষ করিয়া ।
তোমার মাহাতআ্য কথা কি জানিব আমিরে?
তিনি তোমা নাহি চিনি,
ত্যজিয়া কৈলাসধাম প্রেমময়ী মায়েরে ।
তব সম শক্তিধর কেবা আছে জগতে?
ক্রোধ আদি রিপুগণ
আসে না তোমার পাশে একবারো ভ্রমেতে,
কি জানি কি গুণ আছে তব পৃত নামেতে।
সংসারের অনিত্যতা বল দেখি কে পারে
তব সম বুঝাইতে
বিপথগামিনী চিতে
অসার ধনের কথা উ্পমদ-জনেরে
ফিরাইতে পুণ্যপথে পৃতালোক সঞ্চারে?
তবসম শান্তিদাতা কে বা আছে ভুবনে?
অনন্ত শান্তির আশে
যে আসে তোমার পাশে
তোমাকে ত্যজিয়ে সে তো ফিরে নাকো কখনে!
মোহিছ তাহার চিত কোন মায়া সৃজনেঃ
৯০৮৮
ছত্র ধরে ন্যগ্রোধতো সবর্বক্ষণ রয়েছে
অমিল মৃদুল বায়
স্রোতক্ষতী মহাসুখে জয়গান গাহিছে
ম্ঠগুলি জনগণে জয়বার্তী ঘোষিছে।
কি জানিব তব কথা আমি ক্ষুদ্র পরানি
করদেব কৃপা মোরে
বল বল অভাগারে
পাসরিয়া স্লেহ, হায় অয়ঙ্কান্ত পরাণী?
কে মা আমার
কোথায় খুঁজিব হায় কই মা আমার
কে দিবে সে সমাচার
হেরিবারে স্সেহমাখা মুরতি তাহার?
মা বিনা হয়েছে মোর অন্তর পাগল?
বল তরু বল লতা
মা আমার আছে কোথা
কোথা তার দেখা পেয়ে হইব শীতল
কত দেশে বিহঙ্গরে করহ গমন
বলহ আমায় ডাকি
মায়ে কি এসেছ দেখি
কোথায় কেমন ভাবে করেন যাপন?
যদি তারে পথে দেখ শুনে যাও কথা
না বলিও কথাটি মোর
বারেক ঘুচায় যেন আসি মোর ব্যথা ।
অশ্রু টিবি
সদাগতি! সবর্স্থানে গমন তোমার
বল বারেক আমায়
দেখেছ কি জননীরে কোথা অভ্াগার?
বল বল একবার কুসুম সকল?
হৃদয়ের তমোনাশী
কোথা ন্পেলে হেন হাসি
এ হাসিতো হেরি মার হাসি সমতৃল!
হেরিয়াছে জননীরে বল কোন স্থানে;
বারেক দেখাও মোরে,
কৃপা কর অভাগারে,
প্রদানিব তোমাদিগে দেবতা চরণে ।
কোথা যাও স্রোতস্বতি! দাড়াও দাঁড়াও,
দাঁড়াও করুণা করে,
রেখেছি যতন করি তাই লয়ে যাও;
প্রতি উপকার পেতে বাসনা আমার
'এসেছ ক' দেশ দিয়ে
দেখেছ কি মোর মায়ে?
বল দেখি কোথা গেলে দেখা পাব তার?
যদি পথে কোন স্থানে করহ দর্শন
বলিও মায়েরে মোর
অভাগা সন্তান তোর
তোর তবে মম কূলে করিছে রোদন।”"
জলধর! জানি আমি জীবন তোমার
পর উদ্পকার তরে,
স্বীয় দেহ দান করে
করিয়াছ মহীতলে মাহাত্ম্য বিস্তার।
১৯০
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
নাহি কোন স্থানে মানা
সব তব আছে জানা
বলিতে কি পার মোর মার সমাচার?
শশধর, জগতের সুখের নিদান,
তুমি যত সুরগণে
তুষিয়াছ দেহদানে
তোমার প্রসাদে তারা সদা বলীয়ান।
সশ পাথী আদি যত
সবে তব অন্ুরত,
ঈপশানের ভালদেশে কর অবস্থান ।
সংসারেতে যত কার্য্য ঘটে নিরন্তর
সকলি তোমার জ্ঞাত
বল মোরে নিশানাথ,
কোথায় লুকায়ে আছে জননী আমার?
অন্বর ভূষণ ওহে নক্ষত্র নিচয়!
তমোজ্রান্ত পান্থ জনে.
কৃপাকণা বিতরণে
বিখ্যাত তোমরা সবে সমগ্র ধরায়।
গেছে মোরে তেথাগিয়া
জননী আমার কোথা দেও মোরে বলে?
কইরে কেহ তো হায় দেয় নাকো সারা!
ভাবে কি পাগল মোরে,
তাই সারা নাহি করে!
পাগলে কি দয়া কভু নাহি করে তারা।
অশ্রু ৯১১
চাহিনা তাদের দয়া অনুগ্রহ আর,
কি কাজ তাদেরে ডেকে
কাজ নাই মাকে দেখে
ডাকিব, বাসিব ভাল সে নাম তাহার।
বুঝেছি যে ধামে তুমি করেছ গমন
তথা বিরাজিত সুখ,
সংসারের জ্বালাদুঃখ
প্রবেশ করিতে নাহি পারে কদাচন।
নাহি তথা জরামৃত্যু নাহি শোক, ভয়,
নাহি তথা অসন্তোষ,
ঈর্ধা, দ্বেষ, মিথ্যা, রোষ,
পাপ, প্রলোভন আদি নাহি তথা রয়।
নিত্যসুখ চিরদিন তথা বিরাজিত
অমর কিক্করী যত
মেবে তোমা বিধিমত
সুখময় খতুরাজ রয়েছে সতত।
ডাকিব না কভু, তোমা আসিতে অবনী,
মম ক্ষণসুখ তরে
অন্পবিত্র করিবারে
কেন এ অপ্পৃত স্থানে আনিব জানি?
জ্বলেছি, জ্বলিছি, আর জ্লিবগো “পরে
তুচ্ছ সেই কন্চয়,
সয়েছি, সহিছি মাগো সব অকাতরে ।
যবে জীবলীলা অন্তে ত্যজিব ধরণী
শুইব তোমার বুকে
মাথা রাখি মনসুখে
করো কোলে সেই কালে নন্দনে জননি?
১৯২ বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
অশ্রু সম্বন্ধে মতামত
আমরা ইহার আদ্যোপান্তে পাঠ করিয়া বিমুগ্ধ হইয়াছি। মধ্যে২ উচ্ছ্বাস
চিত্তম্পশী। উচ্চভাবের প্রচুর সমাবেশ আছে। সময় সময় মানব মনে হর্ষ
সেই ভাবের আবির্ভাব করিতে সমর্থ তিনিই প্রকৃত কবি। অশ্রুতে মোহিনী
মোহনের সেই কবিত্ব সুস্পষ্ট প্রতিভাত হইয়াছে। আশীবর্বাদ করি নবীন কবি
ইতি ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৩০৫
বসুমতী।
1শবিতযোশী ক্ষ
শীঅঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় বিরচিত।
জ্যৈন্ট,। ১২৮৩ সাল ।
মূল্য দুই আনা মাত্র ।
বিষোশগী বন্ধু
(৬১)
(লোহিত অনহ্যরে সাভ্ি উনবা বিলোদিনী
উদ্িলা উদয়াচলেঃ
আন্পনার নুপপা বলে,
নাশিলা তিমির ঘ্বোর, মধুর হানসিনী।
0২)
জাাশিল জা, লয়ে যত জ্ীীবগণঃ
নিদ্রা কুহক ত্যজিস
সংসারের ভ্ডোজবাতী
মায়াময় কাজ্জে, এ্ুনঃ হইল মগ্ন ।
(৩)
সবাই হর্ষ চিত্ত, গুফুল্লিত মন ।
অভ্ডাগা হেবল আছি,
দুখে, পতখ্ধে পণ্ধে ভ্রমি
শম্শাক্ক বিহীন করি হৃদয় গগন ।
(৪)
আব কি তাহার পুনঃ পাব দরম্ণন?
এতদিন যার সল্বে,
কি অস্পলে, কি শয়লে
জীবন োসব করে মজেসেছিল অন ।
| €৫৮)
শ্রকাশ্পিলা পবর্ধদিকে দেব দিবাকর,
সুদৃশ্য হুইল দৃশ্য,
হাসিলা প্রকৃতি সতী বিকাঙদি অধর ।
৯৯৬
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খও
(৬)
মনের আধার হায়,
তপন কিরণে কিছু ঘৃচাতে না পারিল।
(৭)
স্ষপনেও কভু, করি নাই দরশন;
আমারে একাকী ফেলে
শোক-সাগরের জলে
সখা মোর চিরতরে করিবে গমন!
(৮)
হা দেব বিধাতঃ। একি বিধি হে তোমার,
আশালতা মুকুলিত,
না হইতে প্রস্ফুটিত,
কালের কুঠারে মূল কাটিলে তাহার!
(৯)
শুনেছি, শমন! নাকি তুমি ধন্মরাজ;
ধন্মাধম্ম্ম সুবিচার
সকলি তোমার ভাব;
স্বমতে শাসন কর শরীরী সমাজ?
(১০)
এই কি প্রমাণ তার, দেখি চমৎকার?
অথবা জানাতে বল,
অকালে প্রকাশি বল;
মধ্যাহ্র না হ'তে রবি দিলে অস্তাগার।
(১১)
নিষ্ঠুর, নির্দয়, তুই পামর প্রধান,
হিংসিতে জগত-জীবে সদা অনুষ্ঠান ।
বিয়োগী বন্ধু ৯৯৭,
(১২)
কে তোরে বলে রে ধন্ ধর্ম নিকেতন€
অস্থি মাংস চিবাইতে রত অনুক্ষণ।
(১৩)
সতত অধন্্মে রত,
হিংস্র জীবে অবিরত,
মোর মত কর নিত্য কত শত নরে।
(১৪)
সরলতা ধরে শিশু, মানস মোহন;
অকালে আশ্রয় তার:
অবলা বালারে দিস কতই যন্ত্রণা ।
(১৫৬)
নব কুসুমিতা লতা সমান ললনা,
অকালে আশ্রয় তাবযঃ
অবলা বালারে দিস কতই যন্ত্রণা ।
6১৬)
শৈশব সময়ে, জ্ঞান না হতে সঞ্চারঃ
পিতৃ মাতৃহীন করে
দেখাস্ কেমলে হয় আলোকে আঁধার ।
(১৭)
কত যুবা এ সংসারে প্রথম প্রবেশী;
বণিতা জীবনতারা
প্রণয় প্রতিমা হারা
তোমার কুহকে তারা গৃহস্ছে উদাসী ।
১৯১৮
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
(১০৮)
এ সংসারে সকলেই;
হেন জন কেহ নাই
তোর যাতনায় যেনা হয়েছে বিব্রত।
(৬১১৯)
রে কাল! দুন্ম্মতি দুরাশয় দুরাচার,
না হইতে লৌর্ণমাসী
অকালে গ্রাসিলি রাহু করে অন্ধকার
(২০)
সদা ০স বন্ধুর মূর্তি পড়িতেছে মনে;
মুখ পদ্ম বিকশিত
মৃদু মৃদু হাস্য যেন শোভিছে বদনে।
(২৬৯)
কভু সে শ্যামল মূর্তি পারি কি ভুলিতে?
যেখানে ঘেখালে যাই,
যেন দেখিবারে পাই
মোহিনী -€মাহন-মূর্তি ঠিক সমুখেতে।
(২২)
ভুলিতে বাসনা কবি,
কিছুতেই নাহি পারি,
মোহন-মুরতি মনে জাগে অনিবার।
(২৩)
সখা কি আমার সনে করিতেছ ছল
এই দেখি আর নাই-_
কত খুঁজি, নাহি পাই-_
আবার ক্ষণেক পরে দেখি অবিকল!
বিয়োগী বন্ধু উদ
(২৪)
পাপ পুরী পরিহরি (নিত্য সংসার)
পেয়েছ হে নিত্য দেহ,
অমর ভুবনে গিয়ে অমর আকার
(২৫)
তাই কি হে দেখা দিতে কত এত ভয়?
পবিত্র শরীর এবে
পরশে অশুচি হবে,
অন্তরে অন্তরে তাই হও কি উদয়?
(২৬)
হায়, আমি একেবারে হয়েছি কেমন,
কোথায় সে বন্ধু মোর?
কবে সে রতনে, চোর
হাদয়-ভাগ্াার হতে করেছে হরণ।
যুগ যুগান্তরো পরে? -- হয় না বিশ্বাস!
| (২৮)
পাসরিতে শোকানল শীতল বাতাসে,
চলিলাম বাহিরেতে ভ্রমণের আশে।
বন্ধুর বিষয় যত
মনে পড়ে অবিরত,
জ্বলে তত হত চিত, বিরহ হুতাশে!
(২৯)
ধীরে রবি, িরাডানা পিজি গমনঃ
১৯২০
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
(৩০)
কিছুক্ষণ পরে হবে সকল্পা আঁধার,
কোথা হতে কোথা যাবে,
চিহ্ু কিছু নাহি রবে।
মোর মত দশা পাবে কশ্যপ-কুমার।
(৩১৯)
কিন্তু, হায়, পুনঃ রবি দিবে দরশন,
পুনঃ নিজ তেজোবলে
জগতের অন্ধকার করিবে হরণ ।
(৩২)
মগন করেছে কায়ঃ
পুনঃ কি এ পোড়া আঁখি দেখিবে তাহারে?
(৩৩)
গন্ধা বহ গন্ধ বহে;
সবাই প্রফুল্ল তাহে,
বন্ধু বিনে মোর দেহে লাগে বিষময়।
(৩৪)
ওই 0সই সম্মুখেতে বন্ধুর আলয়ঃ
দ্বিতল সুন্দর ঘর
দেখি অতি মনোহর;
চারিদিকে ধবল প্রাচীর শোভাময়।
(৩৫)
একদিন কত শোভা ছিল রে ইহার
বন্ধু যবে বেচে ছিল।
সে সুষমা ফুরাইলঃ
বন্ধুরি আলয় এবে যেন যমাগার।
বিয়োগী বন্ধু ৯২৯
(৩৬)
নীরব সখার শোকে রবিত ভবন;
বিহঙ্গ পালালে উড়ে
খালি খাঁচা থাকে পড়ে
অযতনে একধারে নীরবে যেমন।
(৩৭)
কম্পিত কেন রে আজি হতেছে হাদয়?
আসিতে এদিক পানে
ধারা বহে দুনয়নেঃ
পুরী প্রবেশিতে মনে ভয়ের উদয়?
(৩৮)
উপনীত হইলাম সখার আবাসে;
অভ্ডরে আশকা করে;
চমকি উঠিল হিয়া, যেন রে তরাশে।
(৩৯)
দেখিলাম সম্মুখের সুদীর্ঘ উঠান,
শোভাময় ছিল যাহা,
জঙ্গলে পরেছে তাহা,
বন্ধু সহ হইয়াছে সব অন্তর্জান।
*% (8০)
একে একে দেখি সব,
নির্্মনুষ্য, নাহি রব,
চাম্চিকা, বাদুড়ের হয়েছে বাতান।
(৪১)
ভালবাসা, সখার ভারত রামায়ণ-__
দেখিলাম এক ধারে
পড়ে আছে জ্তুপাকারে,
কীটে কাটে, পচে যায়, কে করে যতন?
১২
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
(৪২)
সহসা বাজিল কানে রোদনের স্বর!
চমকি উঠিল হিয়া,
চলিলাম বাহুড়িয়াঃ
দেখিতে কে কাদে কোথা, পশি গৃহান্তর!
(৪8৩)
দেখিলাম শুভ্রকেশা, গলিতদশনা,
যন্টি বিনা দেহভার,
কৃতান্ত জীয়ন্তে তারে দিতেছে যাতনা!
(8৪8)
সরলা কোমলা বালা দেখিলাম পাশে
দেহ দগ্ধ পুষ্প প্রায়,
প্রবল প্রবাহ আঁখি ধরেছে হতাশে!
(8৫)
ও আবার নীরবে কে করিছে রোদন?
জন্নক সমান যত্ত্বেঃ
যে আমার সখা রত্রে,
করেছিল এতদিন লালন পালন!
(৪8৬)
ওই কি সে? দেখিতেছি এখন যে জন-_-
মলিন, পাগলবেশ,
নীরবে নয়নে ধারা ঝরে অনুক্ষণ।
(৪8৭)
হায়! সখা কেন হলে কঠিন এমন?
শোক সাগরের জলে,
কেমনে এসবে ফেলে,
অনাসে নিশ্চিন্তে ভুলে আছ সবর্বক্ষণ?
বিয়োগী বন্ধু ১২৩
(৪8৮)
মতুর্ত বাচিতে আশা নাহি মোর আর।
সতত বাসনা মনে;
মিশি গিয়া দুই জনে,
চরমে পরম পথে সহিতে তোমার ।
(8১৯)
কেদোনা গো কর সবে শোক সম্বরণ।
কাদিলে কি দেখা তার
পাবে আর পুনকর্বার?
পাবে না পাবে না কভু থাকিতে জীবন।
(৫০)
সংসারে সবাই এই নিয়ম অধীন ।
কারে কালে আগে ধরে,
কেহ বা পশ্চাতে মবে:
এড়াতে কেহনা পারে আসিলে ০েদিন।
(৫৬)
অতীত চিন্তনে কিছু নাহি ফলোদয়।
মায়াময় এ সংসার,
সুধু ভোজবাজী সার;
মায়া ছাড়াইলে আর কেহ কারো নয়।
সম্পর্ণ।
১২৪ বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
কবি পরিচিতি
অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় £ ঢাকা জেলার ব্রাহ্মণ গায়ে ১৮৫০ সালে জন্মগ্রহণ
করেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের শিক্ষা সমাপনান্তে স্কটল্যাণ্ডের
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএস্সি. ও জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা
লাভ করেন। হায়দরাবাদে থাকাকালে তিনি নিজাম কলেজের বহু উন্নতি করেন।
তার কন্যা হলেন প্রখ্যাত সরোজিনী নাইডু। কন্যা সরোজিনী যেমন কৰি প্রতিভা
সম্পন্ন ছিলেন তেমনি পিতা অঘোরনাথও যে কবিপ্রতিভার অধিকারী ছিলেন
'বিয়োগী বন্ধু' কাব্যটি তার প্রমাণ।
সূত্র : বাংলা বিশ্বকোষ (ঢাকা) ১ম খণ্ড। পৃ:৮।
ভূমিকা
কবিতা রচনার আমার এই প্রথম উদ্যম। এই ক্ষুদ্র পুস্তক মধ্যে সহস্র দোষ
দর্শন হইতে পারে, এবং কবিতা লালিত্যের নিমিত্ত সহম্র বিষয়ের বর্ণনাও
আবশ্যক হইতে পারে; কিন্তু এই অল্পবৃদ্ধি, প্রথম উদ্যমকারী হইতে - ইহা
অপেক্ষা অধিক আশা করা যায় না। ইহাতে নির্ভর করিয়া পুস্তকখানি প্রকাশিত
হইল। ইহা মহামতি পাঠকগণের উদার হস্তে কিঞ্চিৎ স্থান প্রাপ্ত হইলেই আমার
সাধ্যানুযায়ী শ্রমের ফল লাভ করিব ও উৎসাহ সোপানে পদার্পণ করিব।
পরিশেষে কৃতজ্ঞতা সহকারে স্বীকার করিতেছি যে, খিদিরপূর নিবাসী শ্রীযুক্ত
গোলাপ রহমন এই পুস্তক মুদ্রাঙ্কনের সমস্ত ব্যয় সমাপন করিয়াছেন। আমার প্রিয়
সুহদ শ্রীযুক্ত বাবু পুলিনবিহারী আন্য ইহা প্রকাশিত করতে যৎপরোনাস্তি শ্রম
স্বীকার করিয়াছেন। ইতি-__
সন ১২৮০ সাল। বম্সানাথ্া লাতা
উৎসর্ণ
নমি আমি গুরু পদে প্রসাদে যাহার;
'ঘুচিয়া অজ্ঞান তমঃ - কিরণ অপ্পার।
থাকি সদা সম ভাবে, অধীনের পাশে।
যিনি উপদেশ হল নিজকরে ধরে;
কর্ষণ করেছে অতি সযতন করে।
অনুকর্বরা এই ক্ষেত্র - মানস আমার-__
নমি আমি ভক্তি ভাবে চরণে তাহার ।
সিঞ্চিয়াছে ভক্তিবারি করে সমুচিত
যত্র _ বিচোপরে সদা হর্ষোৎফুল্ল মনে;
উৎ্পাটিত করিয়াছে যিনি সমতনে
অজ্ঞান কম্টক যত ক্ষেত্রখানি হ'তে;
রক্ষণ করেছে যিনি সদা কত মতে।
হে গুরো! রোশিত তব যে মানস ক্ষেত্রে
সেই জ্ঞান বৃক্ষ আজি -__ দেখিলাম নেত্রে
উৎপাদন করিয়াছে এই নব ফল,
“অনাথের বিলাপ” যার সদা নাম বল;
সমতনে আমি গুরো - করিয়া চয়ন;
সে ফলে করিয়া এবে মস্তকে ধারণ
অর্পিলাম ভক্তিভাবে তোমার চরণে;
গ্রহণ করুন গুরো কৃপা দরশনে।
যদিও নিরস ফল বৃক্ষ _ উৎপাদক
হে গুরো! তন্রাপি _ (যথা উদ্যান পালক
হেরিয়া প্রসূতা নব রোপিত তরীষে -
দীন ভেবে সুণ্রভাত - আনন্দ তরীষে)
ভবানপি তথা গুরো নবফলে হেরে
অর্পিলাম ফল ল"'য়ে চরণে তোমার
আশিস করুন -- গুরো -_ করি নমক্কার।
একান্ত বশহ্বদস্য
শ্রী রমানাথ লাহা।
অনাধত্েের বিলাপ
বিলাপাধ্যায়।
৮
হায় বিধি! আজি তেন হাদি মোর কাদিল।
নাহি পারি কহিবারে কেন হেন হইল!
হায় বিধি প্রাণ যায়! ঠেকিলাম একি দায়,
সহসা এমন কেন হছি মোর কাছিলঃ
সহসা এজন মন, কেন হল উচাটন?£
০কোন অমঙ্গল বুকি পুনরায় 'ঘটিল।
কাহাকে কহিব কথা, প্রকাশিয়া মন ব্যথা
হায় হায় কেন আজি প্রাণ মম দহিল।
মলে হেন হয় মম, বুঝি পুন2 দুঃখ তম,
আসিয়া হৃদয়াকাশে ক্রমে ভক্রমে উদিল।
হায় বিধি প্রাণ যায়। ঠেকিলাম ঘোর দায়ঃ
সহসা আসিয়া দুঃখ পুনঃ মন ঢাকিল।
কেন হেন কুলক্ষণ, করি আজি নিরীক্ষণ
কেন প্রভু, আজি মম বাম আখি নাচিলগ
দীন হীন দীন. ভ্রাতা, নহে প্রভু জগৎত্রাতা
কিবা অমঙ্গল আজি ঘটাইলে 'ঘটিল?
শোক আদি যত ব্যাধি, সহিতেছি নিরবধি
তবুও কি মনে মম সুখ কম নহিল,
হায় বিধি আজি কেন হাদি মোর কাদিল!
নাহি পারি কহিবারে কেন হেন হইল!
২.
আকালে কৃতাস্ত আনি জনকেরে নাশ্িল।
দুঃখ দিয়ে জনকেরে অকালজেতে বধিল।
১৩০
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খও
অতি সাধ ছিল মনে. পুজিবারে পিতৃধনে
সে সাধে সাধিয়া বাদ কালে পিতা হরিল।
ঘোর দুঃখ সহিবারে, প্রাণ এই প্রাণাধারে
জনমের মত তবু ত্তজ্য নাহি করিল।
হায় হায় প্রাণ দায়! এ দুঃখ কহিব কায়
স্মরণে এ সব কথা মরম যে ব্যথিল।
এ দুঃখ না প্রাণে সয়, পাষাণ বিদীর্ণ হয়
কিন্তু এই হতভাগ্য প্রাণে নাহি মরিল।
লোকে বলে ধরাধাম, সুখে পুর্ণ অবিরাম
কিন্তু মরে ভূমণ্ডল শেল তুল্য বাজিল।
দুঃখ সহিবারে বিধি, হায় আমি নিরবধি
রহিলাম পৃথ্মী মাঝে মরণ না হইল।
সহসা এ জন মন, কেন হ'ল উচাটন
কোন অমঙ্গল বুঝি পুনরায় ঘটিল
হায় বিধি! আজি কেন হাদি মোর কাদিল!
নাহি পারি কহিবারে কেন হেন হইল!
৩
সংসারেতে থাকি, যবে অতি মধুময় রবে,
তখন যে কত মম, ঘুচিয়া দুঃখের তম,
আনন্দ প্রহরি মন - সাগরেতে উদিত।
যখন অন্যায় লাগি; হইয়া দুরন্ত রাগী;
“দাও” বলিতাম, কিন্তু সব তুচ্ছ হইত,
অভাগারে ধীরে ধীরে, শান্তি দান করিত।
আহা! হেন জনকেরে, যম আসি নাশিল,
কোন অমঙ্গল বুঝি, পুনঃ আজি ঘটিল।
হেন মম জনকেরে, আর কিরে দেখিব,
আর কি দুরম্ত রাগে, তার কাছে কাদিবঃ
অনাথের বিলাপ উস্তি
৪
ওরে নিদারুণ যম এই কিরে করমগ
বাখিলি পিতাকে বধে; আপনার ধরম?
তোর কিরে কাজ সদা, আনিবারে চরম
বধিলি পিতাকে ওরে, অকালে ধরিয়া করে,
যাহাতে আমার অতি ব্যথিল রে মরম।
ওরে নিদারুণ যম এই কিরে করম
রাখিলি পিতাকে বধে, আপনার ধরম?
৫
ওরে রে কার্তিকে ঝড়, কেন তৃই ধরাতে।
কালান্তের কালকেতৃ, সম অনর্থের হেতু,
আগমন করিলিলে, অভাগারে মজাতে?
তুই কি শিক্ষক যত; - পিতাকে করিতে হত,
আসিলিরে ধরা মাঝে, যমরাজে পরাতে?
তোর কি এমন কাজ; কেন নাহি ইন্দ্রবাজ,
পরেছিল জন্মকালে তোর শ্রেষ্ঠ শিরাতে।
কেন তোরে পরমেশ, আহরিলে বেস বেশ;
নিন্ম্মাইল বসে বসে; ভুমণগুলে কীদাতে!
সে দিনে কি কোন তার, দিবাভাগ কাটাতে!
তাই কিরে এক ধ্যানে, অতি নিবেশিত মনে
করেছিল তোরে; এই ধরাধামে পাঠাতে।
মোহিনী প্রকৃতি সতী, করি তার কি দুর্গতি,
লও ভণও করিলিরে, অঙ্গোজ্ভ্বল ভূষণ!
কাব্য শ্রীয় কবিগণ, যারে দেখি অনুক্ষণ,
যশ লভে কাব্য লিখি, নিজ মন মতন ।
যা হোক সহসা আসি, নাশিলিরে জীব রাশি,
রজনী মাঝেতে সবে, ধরাশয্যা লইল।
১৩২
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ _ ৩য় খণ্ড
কত শত বৃক্ষশ্রেণী, করে মড় মড় ধবনি;
সমূলে নিম্মল সবে, ধরাশায়ী হইল!
সেও তোর প্রবলেতে. ধরাতলে পরিল।
সেই সব বৃক্ষগণে, তোর নিশা অবসানে;
উচ্ছেদিতে গিয়া পিতা, নিমাঞ্জলি কাটিল।
কোন অমঙ্গল বুঝি, পুনঃ আজি ঘটিল।
ওরে রে কার্তিকে ঝড়, কেন তুই ধরাতে
আগমন করিলিরে, অভাগারে মজাতে?
তোর হেতু হেতু পেয়ে যমে পিতা নাশিল,
যাহার স্মরণে মোর, মরম যে ব্যথিল।
৬
বসরেক পরে মোরে. রোগ আসি, ব্যাপিল,
তাহাতে মরণ যেন, সুখপ্রদ হইল।
তখন মরিতে মম, অতিশয় বাসনা;
সে আশা সফল মম, কোন মতে হলনা ।
দুর্ভাগার অসময়, সখা কেহ নয়নে;
যমেরে ডাকিলে সেও, ফিরে নাহি চায় রে।
বিধি যারে হন বাম, তার দুঃখ অবিরাম,
ধরা মাঝে, তার সুখ, কোথাও না হয়রে।
বিধি যারে অনুকূল, অগাধ সাগরকুল,
তার কাছে ভূত্য ভাবে, সদা বাধা রয় রে।
দুর্ভাগার সনে কেহ, কথা নাহি কয় রে,
দুর্ভাগার মন মাঝে, সদা জাগে ভয়রে।
কোন্ কালে কিবিপাদ, হয় তার পতন;
এই জর জর তার, ল্লান হয় বদন।
রোগ কালে করি যমে, স্তুতি কত মতন.
সন্বোধি যমেরে বলে; “আয় আয়” বচন।
অনাথের বিলাস ৯৩৩
তবুও নির্দয় যম, পাষাণ হৃদয় সম.
দিলে না দিলে না দেখা, অগাগর সনেতে।
ওরে বিধি এই কিরে, ছিল তোর মনেতে!
এই রূপে তিন মাস, শয্যাগত শয়নে,
বৃদ্ধি পায় আশালতা, মন ক্ষেত্রে রোপণে।
তদপরে অভাগার, রোগ হল সাল্ত্বনা,
সে রোগেও দুর্ভাগারঃ কাল শব্যা হল না!
দুর্ভাগার দুঃখকালে, সখা কেহ নয়রে,
যমেরে ডাকিলে সেও, ফিরে নাহি চায় রে!
সে সময় কালশয্যা কেন নাহি হইল;
কোন অমঙ্গল বুঝি পুনরায় ঘটিল।
৭
তৃতীয় বৎসরে পৃথ্রে দিন এক আসিল.
যাহাকে সুখের দিনে সকলেতে কহিল
যে দিনে যুবকগণে. হস্ট পুষ্ট হয়ে সনে.
যে দিনে তরুণীগণে, নবপতি বরেরে
সেইদিন ক্রমে ভক্রমে উপনিত ধরাধামে,
দীন হীন নিরুপায়, অভাগারে মজাতে।
হায় বিধি! হেন দিন, পাঠালিরে ধরাতে?
অতিশয় চিন্তি মন, (সংসার কুটিল বন)
সংসার ত্জিয়া এবে বনবাসী হইব।
হায় হায় প্রাণ যায় _ পূর্ণ নাহি সে আশায়
করিল _ ঈশ্বর কৃপা, দরশিয়া আমাতে;
বজ্ঞাঘাতে সম যেন, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ভাল বোধে,
কহিল আমারে _ দ্বার পরিগ্রহ করিতে;
চাহিনু জীবনে তাতে, জীবনেরে ত্যজিতে।
১৩৪
বাংলা শোককাব্য সংগহ - ৩য় খণ্ড
কি কর বিধির কল, অবশ্য অদৃষ্ট ফল,
ফলিবেক ধরা মাঝে, যাহা আছে লিখন -
কেন নাহি হয়েছিল সে সময় মরণ!
সেই হেতু পিতা সম. গুণবান ভ্রাতা মম;
না শুনিয়া মম কথা, পরিণয় দিইল
হায় বিধি! কেবা হেন অদৃষ্টেতে লিখিল?
যদি বা বিবাহ হল, ফলিল অদৃষ্ট ফল;
কিন্তু মম প্রিয়তম! মন মত নহিল;
কে হেন দুর্দেব মম. অদৃষ্টেতে লিখিল।
ক কব অদৃষ্ট কথা স্মরণে মরম ব্যথা:
হায় বিধি! হেন লেখা হয় কিরে লিখিতে?
ধরিলি লেখনী কিরে; অভাগারে বধিতে?
হায়! অদৃষ্লেতে কেন হেন দেখা হইল!
কোন অমঙ্গল বৃঝি, পুনঃ আজি ঘটিল!
০০
চতুর্থ বর্ষেতে শুন, রোগ এক আসি পুনঃ
ভীষণ দশন দ্বারা, অভাগারে ধরিল!
হায় সখা! কেন হেন রোগ বিধি গড়িল?
কি দৌোষেতে দোবী আমি, ওহে জগতের স্বামি,
কি দোষ করিনু এবে, তব এই চরণে?
সদা ক্লেশ হানিতেছ কেন হেন ধরণে?
ক্ষমা কর _ দীননাথ নিজ ক্ষমা গুণেতে -__
আর নাহি সহে - নাথ, এত দুঃখ প্রাণেতে!
অনুমান করে মন, হে নরদুর্লভ ধন,
প্রতি চক্রে নব নব, অমঙ্গল আসিবে,
অভাগারে পুনঃ পুনঃ, নব ক্লেশ হানিবে।
হায় হায় প্রাণ যায়, এ দুঃখ কহিব কায়,
স্মরণে এসব কথা. মরম যে ব্যঘিল;
অনাথের বিলাপ ৯৩৫
এত দুঃখ সহে তবু প্রাণ কেন রহিল!
যাহা হতে অভাগার প্রাণ রক্ষা হইল:
চিকিৎসা প্রভাব যাঁর, আর্্যাবর্তে রহিল,
সারজারী কোষ যিনি, অতিশয় গশুণমণি,
মেইজন অভাগার রোগ শান্তি করিল,
অভাগার শান্তি হেতু কত অস্ত্র ধরিল।
ধন্য ধন্য বেলি তুমি, আসি এই বঙ্গভূমি,
কতজনে প্রাণ দানে, যশ কীর্তি স্থাপিলে,
বঙ্গবাসীদের কত উপকার সাধিলে।
কিন্তু ওহে কবিরাজ, _ না করিলে ভাল কাজ,
এই অভাজন জনে, শান্তি দান করিয়ে
হায় বিধি! কিবা ফল এ জীবনে রাখিয়ে!
হায় হায় প্রাণ যায়! ঠেকিলাম একি দায়,
স্মরণে এসব কথা, হাদয় যে দহিল।
এখন দেহেতে কেন প্রাণ মম রহিল।
হায় অদৃষ্টেতে কেন হেন লেখা লিখিল
কোন অমঙ্গল বুঝি পুনঃ আজি ঘটিল!
সহসা এমন কেন হৃদি মোর কাদিল!
৯৯
পঞ্চম বর্ষেতে হায়! কি ঘটনা 'ঘটিল
কহিতে না পারি যেন হৃদে শেল বিধিল।
সে ঘটনা কহিবারে যেই ইচ্ছা হয়রে,
বাগেশ্বরী দ্বারা অনি বাক হয় লয়রে!
কি কুক্ষণে সে রজনী হয়েছিল প্রভাত
এসেছিল করিবারে অভাগারে অনাথ ।
শোক প্রকাশিনী বাকে অবরোধ দেখিয়া;
মনে হয় প্রকাশিব লেখনীতে লিখিয়া।
১৯৩৬
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ __ ৩য় খণ্ড
তবুও কি সে ঘটনা -- প্রকাশিয়া লিখিতে;
পারি কভু ধরামাঝে এ জীবন থাকিতে
লেখনী ধারণ মাত্র নয়নান্বু বয় রে।
সমাদ্রিত অশ্রু জলে পৃথ্বি বুঝি হয়রে!
অশ্রু পূর্ণ দরশনে দেখিতে না পাইরে!
লেখনী চলে না যত চালাইতে চাইরে!
হায় নিদারুণ বিধি! কেন হেন করিলি।
জনমের মত এই অভাগারে সারিলি?
কেন হেন নিদারুণ শিবে বজ হানিলি;
কি দোষেতে দোষী দেখি, এত কষ্ট দানিলি?
১০
ওরে শুধাকর -- তোরে শুধাকর বলে কে,
বিষাকর বিষাধারে শুধাকর ধরে কে?
শুধা হেতু শুধাকর নাম তোরে সকলে,
দানিয়াছে ধরামাঝে মানবিয় মণ্ডলে।
সেই হেতু তোরে আজ শুধাকর নামেতে,
সম্বোধন করিতেছি এই ধরা ধামেতে।
তা না হলে কোন মতে শুধাকর বলেরে,
নাহি ডাকিতাম তোরে শোক সহ্য করেরে!
কোন জন বুদ্ধিহীন হেন নাম রেখেছে!
বিষাকর দিতে কেন শুধাকর দিয়েছেঃ
সবে বলে তোর রাজ্যে সুখী হয় সকলে;
আমি বলি সুখী কিরে হয় কেহ গরলে?
যে রাজ্যে সবর্ধদা করে হলাহল উদগার;
সেই রাজ্যে চৌোর্যয ভয় জাগরুক সদারে;
তাতে প্রজা কভু কিরে থাকে সুখ বিহারে?
ওরে শুধাকর তোরে কেন হেন মতেতে;
দোষারোপ করিলাম জানিস, কিরে মলেতে?
অবশ্য জানিস্ তুই দোষারোপ কারণ,
ঘটে ছিল এ ঘটনা তো বইহত সদন।
অনাথের বিলান্স ১৩৭
বোধ হয়ে মম পাশে তিরক্কৃত হইয়ে,
বলিবিনা মানবেরে প্রকাশিত করিয়ে।
কিন্তু ওরে এ ভাবনা মনে কভু ভেবনা
মনেতে ভেবেছ বুঝি আমি কারেও কব না?
এই যে লেখনী আমি হস্ত মাঝে লয়েছি,
তোর দোষ প্রকাশিতে সক্কল্পিত হয়েছি।
এবারেতে মানবেরা কর সবে শ্রবণ,
শুধাকরে দুষিবারে দোষারোপ কারণ ।
শুধাকর তারে নাহি নিবারিতে পেরেছে।
যে নৃপতি চৌর্য্য ভয় দুরিভূত করিতে
নাহি পারে কোন মতে নিজ রাজ্য হইতে;
ওহে নর! তার রাজ্যে কেহ কিহে কখন;
পারে কভু সুখে কাল করিবারে যাপন?
শুধাকর রাজ্য মাঝে যম নামে তশ্কর,
হরেছে অমূল্য নিধি পাওয়া অতি দুক্কর!
গুণবান সহোদরে দুষ্ট যম হরেছে
মোর পক্ষে ধরাখান সুখশ্ুন্য করেছে।
একথা কহিতে মম হিয়া অতি ব্যথিল!
তিগু ধার শেলভুল্য হৃদে যেন বিধিল।
হায় বিধি! এ ঘটনা কেন তুই ঘটালি£
অভাগারে পৃথ্বি মাঝে এক কালে মজালি
তাই বুঝি দুঃখ শেল মেলি মম হৃদেতে?
ওরে বিধি, কেন তুই এ ঘটনা ঘটালি?
জনমের মত এই অভাগারে মজালি!
হায় হায় প্রাণ যায় হৃদি মম দহিছে;
কহিতে এসব কথা হৃদে শেল বিধিছে
৯৩৮
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খও
হায় বিধি, আজি কেন হৃর্দি মোর কাদিল!
নাহি পারি কহিবারে কেন হেন হইল!
৯৯
চোরে চুরি করিবারে গৃহে সিধ কাটেরে,
মম চুরি করিবারে রোগ বাণ হানেরে!
নানা রোগ বাণে পর্ণ তুমি এর বয়রে!
কাহার সাধ্যেতে বল সংখ্যা তার হয় রে!
হেনে ছিল সহোদরে দুষ্ট সম আসিয়ে।
উক্ত নাম একবার শিক্ষকের সদনে
শুনিয়া ছিলাম আমি মম দুই শ্রবণে।
সে হেতু যখন আমি শুনিলাম গৃহেতে
তখন আনন্দ বারি উৎলিত মনেতে
অজানিত রোগে এবে পাব আমি দেখিতে
সে রোগের হাব ভাব দেখে আমি বিস্মিত
মানস মন্দিরে হ'ল হর্ষদেবী উদ্িত।
৯২
কি রোগ কি রোগ হায় কি রোগ কি রোগ
জানি না জানি না কভু, এ রোগ কি রোগ।
হাড় ভাঙ্গা _- হেন রোগ _- এই ধরাসনে,
দেখিনি দেখিনি আমি কভু দরশনে।
এত যে বয়স মম হয়েছে যৌবন
দেখিনি দেখিনি কভু আমার নয়ন।
এই রোগ কষ্ট ভোগ দেয় কত নরে!
আহা আহা মরি মরি চো'লি থাকে ধরে।
এই রোগে অভিভূত হয় যেই নর,
কাল বর্ণ দেহ শীর্ণ ভাঙ্গা হয় স্বর।
অনাথের বিলাপ ১৩৯
নিদ্রাহার পরিহার হয় সদা তার:
চমকে চমকে উঠে বেকে যায় হাড়!
ধনুক আকার মত দেহ তার হয়ঃ
মরি মরি কি যন্ত্রণা রোগী রোগে সয়।
মত্র বদ্ধ -- কোষ্ত সুদ্ধ নাহি কভু হয়ঃ
জোলাপ হজম হয় সদা শ্বাস বয়।
বিকট আকার হয় দেখে লাগে ভয়
বাত বৃদ্ধি কালে রোগী কাপে থর থর।
সে কালে রোগীর বল হয় শতগুণ,
ধরিলে কাহার হাত ভেঙ্গে করে খুন।
এই রোগাক্রান্ত নরে দেখিলে নয়নে,
অমনি দানোর রূপ পরে যায় মনে।
স্বপ্রাধ্যায়
১
ঝরিতে লাগিল নয়নে
স্মরিয়া স্মরণে, দুঃখ অগণনে,
লেখনী চলে না লেখনে।
হিমানী স্রোতের মতন।
হাদে হায় হায় বেদন প্রভাস্য
শরব্য করেছে মদন
যেন প্রবাহিনী সাগর গামিনী
ব্রন্মা কমণ্ডলু হইতে।
গণ্ড বয়ে বয়ে, আসে ধারা হয়ে,
শিবের জটায়ে মিলিতে।
যবে প্রবাহিনী নেত্রাম্থু ধারিণী,
১৪০
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
তবে আঁখি রস পড়ে টস্ টস্
মুকৃতা রূপিনী নিহারী।
লইয়া বসন, মুছিয়া বদন
নয়ন বিস্তারি দেখিনু
দেবী অপরূপ রূপ অপরূপ
মধুর মাধুরী হেরিনু।
মধুর চাউনি অপ্পৃকর্ব বিউনি,
দাড়ায়ে সম্মুখে মধু ছোটে মুখে
অন্পুকর্ব মধুর ভাষিণী।
রূপ অনুপমা নারে রে উপমা;
জননী হৃদয় ধারিণী,
শুনিনু পুনঃ রে, আয়রে আয়রে
বদনে বলিছে কামিনী।
২
ক্ষণেক থমকে, বলিল আমাকে -_
ওরে বাছাধন করো না রোদন,
কর কর বাপু, ধেরয ধারণ,
রবে না কুদিন, হইবে সুদিন
রবে না রবে না রবে না এদিন
ওরে বাছাধন করো না রোদন,
কর কর বাপু ধেরয ধারণ;
কেদনা কেদনা এ দিন রবে না,
হৃদয় তোমার অসুখে হবে নাঃ
আয় বাছাধন, করো না রোদন
অসুখ ত্যজিয়ে আমার সদন
আয়রে রতন, আঁধলার ধন;
আসিয়া কররে কোলেতে শয়ন;
অনাথের বিলাপ ৯৪১
যাবে দুঃখ নিশি হেসে সুখ কাশি
উদ্দিত হইবে গগনেতে আমি;
তব সুখ তারা, সহ সুখ তারা
আসিয়া ক্রমেতে উদিবে তাহারা;
তখন হাসিবে হবে ঢল ঢল
হবে ঢল ঢল সরোজ কমল
সদৃশ তোমার বদন কমল --
আয় বাছাধন করো না রোদন
আসিয়া করবে কোলেতে শয়ন।
তমাচ্ছন্ন সদা মন, নাহি হয় বিমোচন;
বারিদে যেমন, ঢাকেরে গগন
তেমতি মনরে তিমির জালে।
নাহি করে বরণ, সদা করে গরজন
বরষণে মতি, নয়রে কৃমতি,
নাশিল -খালিরে কিরণ মালা।
যতেক ইন্দ্রিয়গণ, ভেকরূপ অগনন,
দেখেছে সহিতে দুঃখের জ্বালা ।
তৎপরে শাম্তনাবায়, মানস গগনে ধায়,
জলদ নাশনে যেমন গগনে,
পবন নাশেরে, বারিদ রাশি ।
মানস গগনে" আর না রহিল দুঃখভাব,
বাতাস বহিল অদৃশ্য হইল,
নীহার যেমন, উদিলে কাশি।
গগন হইল স্থির নাই আর ঘন বীর,
১৪২
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
শোভিল গগন প্রকৃতি কোলে,
তাহাতে গগন হইয়া মগন;
ঘুমাল কোলেতে প্রকৃতি বোলে।
সে রূপ মানস মোর ছিডিলে দুঃখের ডোর;
খেলিতে লাগিনু আনন্দে ভাসিনু,
পরম খাদক শিশুর মতন।
শ্রান্ত লভি অবশেষে, আকুলিত নিদ্রাবেশে;
জননী বলিনু, শয়ন করিনু,
কামিনী কোলেতে - (ুঃখেতে হত)
সে নয় সামান্য ধনী, নিদ্রাদেবী সে রমণী,
ধীরে ধীরে কিবা ধরিল তান।
একে দুঃখীজন. ঘুমেতে মগন;
তাহাতে আবার ঘুমের গান।
“অবোধ ছেলে চাদ চায়, চাদ কি কভু ধরা যায়,'
ধরিল কেমন ঘুমের গান।
মোহিনী স্বরের সাথ, শিরে ধীরে করাঘাত,
ঘমেতে মগন, নাইরে চেতন,
হায়রে কেমন জুড়াল শ্রাণ।
অনাথের বিলাপ ১৪৩
হেরিতেছি কিবা বিরাজে কানন-_
কেমন ধরি'ছে অপ্রকর্ব বরণ-
শুনিতেছি _ কিবা গায় পিকগণ;
যাহাতে হয়েছে কানন শোভা ।
আহা কি আনন্দ আজিকে আমার
১৪৪
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
তনু করে ক্ষীণ ত্যজিয়ে বিভব,
দিবা নিশি কত অসাধ্য সাধনা-__
অকালে মরেছে কৃতান্ত করে।
“দেখরে - বাল্মিকী, কবি কালিদাস,
লভিতে দুর্লভ মুকুট রতনে
কেহ বা বিপিনে কেহবা গহনে
চিরকাল দুঃখে করেছ বাস।
অনাথের বিলাপ দি
ভারত বিজয়ী ভারত অঙ্গনা -_
লভিতে মুকুট করিয়ে বাসনা _
করেছে মানবে সমরে নাশ।
এনসন, আদি আর কতজন,
অপ্পুকর্ব মুকুটে করিয়ে বাসনা--
সাগরে ত্যজিয়ে জীবন কামনা-_
পাল তুলে গেছে প্রাচীন কালে।
দাশুরঘী আদি শ্রীরাম প্রসাদ;
লভিতে অমূল্য মুকুট প্রসাদ -
হেসে খেলে রাগ রাগিনী সনেতে
যন্ত্র তন্ত্র যত বাজায়ে তালে ।
দেখ - একবার মেলিয়া নয়ন;
অখচ তাতেও জুড়ায় নয়ন-_
হেরিলে উহারে মনের মত।
দ্বিতীয়ত দেখ মুকুট রতন
কলঙ্কিনী শশি সদৃশ কিরণ
থেকে থেকে কিবা করিছে ধারণ:
চিরস্থায়ী কোন মহিলা ভূষণ
ব্যবহারে যথা কিরণ হত।-_
“তৃতীয় মুকুট দেখরে নয়নে__
লোভে বশ কভু যেনরে ভূবনে
হওনা - বাছারে জীবন থাকিতে
করেনা সাধনা উহারে লভিতে;
যাহার কিরণ জোনাকী মত।
“তিনটী মুকুট, অশুল্য ভূষণ
কামিনী করেছে শিরেতে ধারণ-
১৪৬
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
দেখ দেখ যেন ভুলনা ভুলনা
-_ পাবে না হইলে সময়গত।
প্রধান মুকুট তারাই পায়রে;
সমর প্রভৃতি অন্যান্য কাজেতে,
চিরকাল যাহা রয়রে।
এই আছে এই ঘুচিল কিরণ;
তারা এ মুকুট আনন্দে লভেরে
চিরকাল কিছু নয়রে।”
হেন কালে নিদ্রা অন্তর হইল-_
কোথায় - এখন কানন রহিল,
কোথায় বা সে মলয় পবন,
বসন্ত প্রভাব কোথায় এখন;
এককালে সবে অন্তর হল।
কোথায় কামিনী, মুকুট ধারিনী,
কোথায় বা সেই যুবতী কামিনী,
যে জন আমারে লইয়া সতেতে
গিয়াছিল সেই বিজন বনেতে;
সকলি এখন কোথায় গেল!
সম্পূর্ণ।
(লেখক-পরিচিতি পাওয়া যায়নি)
৩৯5
শ্পত্তাাল ন্যাপ
শীযোগেন্দ্রনাতথ চট্টোপাধ্যায়
প্রণীত
কমলালয় বন্ত্র।
শকাব্দপা ১৭৮২
১৮৬০ খু
প্ত্রশোকাতুর পিতার বিলাপ
হে জগদীশ্বর! তোমার কি অপার মহিমা, কি আশ্চর্য্য কীর্তি, কি অদ্ভুত
গতি, তোমাকে যে, অপার করুণাময়, নিখীলরঞ্জন, দয়ীতের দুঃখনাশন, এবং
কল্সবৃক্ষ বলিয়া সকলে সম্ভাষণ করে, তাহা সমুদয়ই বৃথা হইল. আর কখনই
আমার মনে সত্য বোধ হইবে না; কেন না, তুমি ক্ষণেক একটা সুফল প্রদান
করিয়া, সমুদায় শোক, দুঃখ, রোগ, আর্থানাটন প্রভৃতি যাবদীয় ক্লেশ ধবংস কর.
অতিব-গভির-সুখসাগরে আমাকে এবং আমার বান্ধবগণকে নিমগ্ন কর. তুমিই
পুনবর্বার তাহাকে নষ্ট করিয়া, সকলই হরণ করিলে -সকলই ঘুচালে - সকলই
মিথ্যা বলালে--বিপদ ঘটালে-_আমার সন্তান হওয়াতে যাহারা দুঃখিত ছিল.
তাহাদিগকেও হাসালে। এই কি তোমার উচিত? আমি ত কখন এঁ মৃত-সুফল
নিমিত্ত প্রার্থনা করি নাই, তুমি সবর্ব অন্তর্যামি হইয়াও কি তাহা জান না। সেই
তনয়-রত্ব তুমিই আমাকে প্রদান করিয়াছিলে, আবার ফলের আস্বাদন করিতে না
করিতেই তুমি তাহাকে নিজ পাসে রাখিয়া দিলে। যদি ইহাই তোমার মনে ছিল.
তাহা হইলে সেই ফল অর্পণ না করিলেই ত ভাল হইত, তোমার ফল প্রাপ্তে
আস্বাদন আশে তাহাকে আমি অনেক কষ্টে ও অনেক যত্বে রক্ষা করিয়া
আসিতেছিলাম, তুমি যে তাহাকে অকস্মাৎ হরিবে তাহা স্বশ্পের অগোচর-- কল্পনার
বাহির বিবেচনার অতীত--আশার বিপরীত। তুমি যদিও সেই ধন অনায়াসে
হাসিতে হাসিতে হরণ করিলে, কিন্তু তাহার বিয়োগজনিত দুঃখে আমি যে কি
পর্য্যন্ত দুঃখিত হইয়াছি, কোটি কোটি বৎসর নিয়ত প্রকাশ করিলেও তাহার শেষ
হইবেক না। দুঃখ বর্ণন বিষয়ে শ্রবর্ত হইলে লেখনী আড়ঙ্্, দেহ কম্পবান,
নয়ননিরে বক্ষস্থল প্লাবিত হইতে থাকে, হৃদয় বিদীর্ণ হয়, বুদ্ধির বৈপরীত্য জন্মে,
এবং অবশেষে প্রাণ ত্যাগ করিতেও ইচ্ছে যায়।
হে নাথ! এই সব দুঃখ দিয়া তুমি নিজ নামে কলঙ্ক করিলে, একবারও কি
ভাবিলে না সেই ধন কত আদরের ছিল। এমনিই কি করিতে হয়, একান্তই যদ্যপি
তুমি আমাকে ক্লেশসাগরে নিপতিত করিবে এমত বাসনা ছিল, তবে অন্য কোন
প্রকার দুঃখ প্রদান করিলে কি তোমার ক্ষতি হইত? আশা নিবৃত্তি হইত না?
আহা! সেই আমি, এই জগতিতলে পূবের্ব যাহা কিছু ছিল, সমুদয়ই বর্তমান
আছে, কিন্তু সেই স্নেহভাজন পুত্র বিহনে পৃথিবী শূন্যময় দেখিতেছি, গৃহ অরণ্য
বৎ বোধ হইতেছে, সুখাস্পদ বস্তুকে দুঃখাধার জ্ঞান হইতেছে, প্রিয়তমাকে শত্রু
বোধ হইতেছে, তাহার পীযৃষময়বাক্য শ্রবণে আর সুখানুভব হইতেছে না, অর্থাদি
অপ্রয়োজনীয় বোধ হইতেছে এবং মরণকে মোক্ষ বোধ হইতেছে।
পৃত্রশোকাতুর পিতার বিলাপ
ধন্য হে তোমার কীর্তি জগত আধার।
কে বুবিছতে পারে নাথ মহিমা তোমার ॥
ক্ষণেক অতুল সুখ দাও জীবগণে।
পরক্ষণে দহ তারে অসুখ-দহনে ॥
যে দিনে পেলেম কোলে তনয় রতন।
ভাবিলাম হলো বুঝি সুখ উদ্দীপণ ॥
এখন কোথায় সুখ কোথা বা তনয়।
সে ধন বিহনে হেরি সব তমোময় ॥
দিয়ে কেন পুনরায় হরিলে তাহায়।
দয়াময় নাম কেহ দিবে না তোমায় ॥
যে দুখ পেয়েছি আমি হারায়ে সে ধনে।
জাগিছে হাদয় মাঝে প্রকাশি কেমনে ॥
যদি হই “কুবেরের” সম ধনবান।
যদি হই তত্বজ্ঞানী “বাল্লিকী” সমান ॥
যদি আমি হই “বৃকোদর” সম বীর।
যদি আমি হই “বৃহস্পতি” সম ধীর ॥
তথাপি মনে দুঃখ ঘুচিবার নয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হৃদয় ॥
যদি আমি হই কভু সবর্বাংশে প্রধান।
যদি পাই সমুজ্জ্বল সিংহাসনে স্থান ॥
যদি হই মাননীয় সুরপতি সম।
যদি পারি পরাজয় করিবারে যম॥
যদ্যপি জীবন মম বশীভূত রয়।
যর্দি আজ্ঞাকারী হয় রিপু সমুদয় ॥
তথাপি মনের দুঃখ ঘুচিবার নয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হৃদয় ॥
১৯৫৭
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
যদি হই সসাগরা ধরণীর পতি।
যদি “যুধিষ্ঠির” সম হয় ধন্তে মতি॥
যদি “বিশ্বকন্মা” সম হই শিল্পকর।
যদি পরাভায় করি বিদ্যার সাগর ॥
তথাপি মনের দুখ ুচিবার নয়।
না হেরে সে চাদমুখখ দহিছে হৃদয় ॥
যদি প্রকৃতির শোভা করি দরশন।
পলকে পূর্ণিত হয় যুগল নয়ন ॥
কবিকুল অগ্রগণ্য কালীদাস যত।
কিন্বা গুণাকর কবি যেমন ভারত ॥
যদ্যশপি তাদের মত হই কবিবর।
স্ষভাবে তুষিতে পারি সবার অন্তর ॥
তথাপি মনের দুখখ ঘুচিবার নয়।
না হেরে সে চাদমৃখখ দহিছে হাদয় ॥
যদি হই সাধুদের প্রেমের ভাজন।
যদ্যপি ভারতবন্ধা কহে সকর্বজন ॥
দীনের দীনতা যদি আমা হতে যায়।
চিররোগী গণে যদি রোগ শান্তি পায় ॥
যদি কভু দানশীল হই কর্ণ সম।
যদি আমি পাই পুনঃ পুত্র অনুপম ॥
তথাপি মনের দুখ ঘুচিবার নয়।
না হেরে তে চাদমুখ দহিছে হৃদয় ॥
স্পা পপ ০
এমন শ্রাণের নিধি লুকালো কোথায় ।
কোথা গেলে পুন আমি পাইব তাহায় ॥
কোলে আয় কোলে আয় ওরে যাদুধন।
হেরে তোর মুখশশ্িি জুড়াই জীবন ॥
কোথা গেলি বাপধন, দেখা দে আমায়।
হূদয় মাঝেতে আমি রাখিব তোমায় ॥
১৫৩
কোথা গেলি একবার, দুশ্ধ কর পান।
কোথা গেলি একবার, হেবঝে তোষ প্রাণ ॥
তোরে হেরিবারে মনে সদা ইচ্ছা হয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হৃদয় ॥
কোথা গেলি একবার, পরহ ভূষণ
কোথা গেলি একবার, কররে রোদন ॥
হৃদয়ে জ্বলিছে তব বিরহ অনল ।
দরশন-বারী দানে কররে শীতল ॥
তোরে হেরিবারে মনে সদা ইচ্ছা হয়।
না হেরে সে চাদমুখখ দহিছে হাদয় ॥
অনিবার পিতা তোর করিছে রোদন।
একবার না ভাবিলে তাহারে আপ্পন ॥
কোথা গেলি? না হেরিয়া তোমার বদন।
তোমার জননী সদা, করিছে রোদন ॥
তোরে হেরিবারে মনে সদা ইচ্ছা হয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হৃদয় ॥
কোথা গেলি কেবা আর, খেলিবে ধুলায়।
কোথা গেলি কেবা আর, শুইবে দোলায় ॥
কখন এ দুঃখ নাহি. হইবেক দুর।
তোমা ধন বিনে আমি. হয়েছি ফতুর ॥
তোরে হেরিবারে মনে সদা ইচ্ছা হয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হৃদয় ॥
তোমার নিধনে হলো, দেহ মম হাস।
তুমি বিনে সদা হয়, মূর্খতা প্রকাশ ॥
তোমা ধন বিনে নাহি করিব আয়াস।
কখন হবে না মম, সুখ অভিলাষ ॥
কখন হব না তব শোক বিস্মরণ।
কর্ম কাজে কখন না যাবে মম মন॥
তোরে হেরিবারে মনে সদা ইচ্ছা হয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হৃদয় ॥
১৫৪
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ -- ৩য় খণ্ড
তোমার বিহনে ইচ্ছা হয় হই যোগী।
তোমারে ভাবিয়া হইলাম, চিররোগী ॥
ওরে যাদু তুমি বিনে হেট, মম মুখ।
তোমারে ভাবিলে দুখে ফেটে যায় বুক॥
তুমি বিনে বুঝি যেতে, হলো বনবাস।
তোমার বিহনে মনে, নাহিক উল্লাস ॥
তোরে হেরিবারে মনে সদা ইচ্ছা হয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হৃদয় ॥
আর নাহি করি আমি. পুত্রধনে আশা ।
আর নাহি মনে ভাল লাগে ভাল বাসা॥
কোথা গেলি দেখা দেরে, দুখি পিতা বলে।
কোথা গেলি বস এসে পিতামহি কোলে ॥
কোথা গেলি দুখ দিয়ে তোমার দাদারে।
কোথা গেলি কেবা আর বাচাবে আমারে ॥
তোরে হেরিবারে মনে সদা ইচ্ছা হয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হাদয় ॥
কোথা গেলি ফেলে মোরে দুখের সাগরে।
কোথা গেলি কেবা আর ঘর আলো করে ॥
কোথা গেলি চলে তুই কাদে জ্যেঠা তোর।
কোথা গেলি এই দশা করি তুই মোর ॥
কোথা গেলি তোর দিদি পড়ে যে ধুলায়।
কোথা গেলি কাদে তোর কাকা সমুদায়।
তোরে হেরিবারে মনে সদা ইচ্ছা হয়।
না হেরে সে চাদমুখ দহিছে হাদয় ॥
কোথা গেলি পিতৃবন্ধু কাদে সব তোর।
তোর শোকে ভেবে তারা হতেছে অঘোর ॥
কি কাজ আমার আর অর্থ উপার্জনে।
কি কাজ আমার আর আত্ম বন্ধু গণে॥
কি কাজ আমার আর বেচে ত্রিভুবনে।
কি কাজ আমার আর পরিবার সনে ॥
৯১৫৫
যদি নাহি হত সুখ পাইয়া তাহায় ॥
যদি নাহি আগে তারে ভাবিতাম মম।
যদি নাহি করিতাম তার উপসম ॥
যদি সেই হলে নাহি করিতাম ব্যয়।
ভূমিষ্ট হইবা মাত্র হতো যদি লয়॥
কেন আনিলাম স্বর্ণ ভূষণের তরে।
উজ্জ্বল করিতে তার মুখ সুধাকরে ॥
আগে যদি জানিতাম হইবে এমন।
তাহলে কি ভাবিতাম তাহারে আপন
তাহা হলে এই রূপ হতো না কখন।
ভাবিয়া ভাবিয়া সারা হলেম এখন ॥
ওহে জগদীশ শুন মিনতি আমার।
মম প্রাণ হরে কর এদুখে নিস্তার ॥
তাহা হলে ঘুচে যাবে দুখখ মোর সব।
আর নাহি মলেতে পড়িবে তার শব ॥
আর না কাদিব আমি তাহার লাগিয়া ।
আর নাহি সারা হব তাহারে ভাবিয়া ॥
মনদুঃখে দিবা নিশি চক্ষে নীর বহে।
ওষ্ঠাগত প্রাণ সদা দুখ কথা কহে॥
এখন অনেক দুখখ আছে মম মনে।
শুনিলে দুখি অধিক হবে বন্ধুগণে ॥
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খগ্ড
হইলে মরণ মম দুখ যাবে দুরে।
যাতনা এড়াব গিয়ে ধন্মরাজ পুরে ॥
রাগিণী বেহাগ---তাল আড়া ঠেকা।
নিদয় শমন, রে তোর এই কি বিচার।
অকালে নাশিলি মম প্রাণের কৃমার।
ওরে রে নিষ্ঠুর বিধি, এ নহে বিহিত বিধি,
হরিলি হৃদয় নিধি, করিলি আকুল-__
সদা সাধ ছিল মনে. সুখি হব পুত্র ধনে,
সে সব বাসনা হলো, দুখের আধার! !
হে অবোধমানস! ধৈর্য ধর. ভ্রান্তি হর. সামান্য ঘটনাতে এত
বিলাপ করিলে কি হইবে, সেই প্রাণাধিকপ্রিয়তম পুত্রের রক্ষা জন্য
সাধমতে ব্রটী কর নাই। ফলে তাহা সাধ্যতীত, তাবৎ মহৌষধি
প্রদান করিলে, অপর্য্যান্ত অর্থব্যয় করিলে ও আপন প্রাণ নষ্ট
করিলে এবং ঈশ্বরকে স্মরণ করিলেও রক্ষা হইতে পারিত না।
হে মন! কেন আর বৃথা রোদন কর, কেন আর বৃথা অধৈর্য্য হও?
এবং কেনই বা দুঃখ প্রকাশ কর? যদি জগতের সকল প্রকার
উত্তম অবস্থাতে নিবিষ্ট হই, তথাপি এই দুঃখ যাইবেক না তাহাকে
সবর্দাই মনে পড়িবে ইহা তোমার ভ্রম মাত্র।
পরিশেষ আমার এই নিবেদন যে, তুমি সমুদয় শোক দুঃখ
পরিত্যাগ করিয়া সৎকর্ম প্রবৃত্ত হও, কি জানি হঠাৎ কখন মৃত্যু
হইবে তাহা হইলে তুমি নিজ কর্ম্ম দোষে অতিশয় ক্েশ পাইবে।
নাই__সৎ কন্্ম করা নাই, তখন তুমি অবশ্যই সবর্ব ধন শ্রেষ্ঠ
মুক্তিধন হারাইয়াছ, তাহা কি একবারও মনে হয় না, কেবলই
সামান্য পৃত্রের নিমিত্ত এত দুঃখ প্রকাশ করিয়া মনুষ্য নামের
কলঙ্ক করিও না।
১৫৭,
মিছা কেন অকারণ ভাব ওরে মন।
নাহি জান সে কখন নহেক আপন ॥
সকলি অসার ভবে কিছু নয় সার।
বিনা সেই নিরাকার জগত, আধার ॥
এই আছ এই নাই কখন কি হয়।
বিভূ গুণ গান করি কাল কল ক্ষয়॥
কে তোমার তুমি কার কেন তার লাগি।
অসার সংসার প্রতি বৃথা অনুরাগী ॥
ক্ষণেক থাকিলে ভাল মনে হয় সুখ।
ক্ষণেক রোগেতে তব হয় অতি দুঃখ ॥
চিরজিবী নহে প্রাণী হইবে রে লয়।
বিভু গুণ গান করি কাল কর ক্ষয়॥
ক্ষণেক বিপদে তুমি করহ শ্রার্থনা।
ক্ষণেক সুখের লাগি করহ ছলনা ॥
সামান্য লাভের তরে মিথ্যা কথা কও।
সামান্য আশার বশে পর ধন লও ॥
এত সুখ কিসে তুমি পেয়েছ সংসারে ।
গৃহ কাজে ব্যস্ত সদা নাহি ভাব তারে ॥
দারা সুত বন্ধগণে করি দরশন।
অহরহ করে থাক সুখ আম্বাদন ॥
যারে তুমি নিজ ভাব নিজ সে তো নয়।
বিভু গুণ গান করি কাল কর ক্ষয়॥
নাহি জান এক দিন হইবে মরণ ।
জান না তখন কেহ না হবে আপন ॥
যে যাবার সেই যাবে পড়ে রবে সব।
শুধু মাত্র সার হবে হাহাকার রব ॥
তাই বলি মায়া ময় ত্যজি সমুদয়।
বিভু গুণ গান করি কাল কর ক্ষয়॥
এভাবে পাপের ভোগ তেজিলে জীবন।
অনায়াসে হবে তব সর্গেতে গমন ॥
১৯৫৮
বাংলা শোককাব্য সংগ্রহ - ৩য় খণ্ড
সামান্য রাগের ভয়ে কররে বিবাদ।
আপনি আপন দোষে ঘটাও প্রমাদ ॥
অর্থ আশে নিয়তই কর মহাপাপ ।
অনর্থক পাও তুমি যথোচিত তাপ ॥
অনিত্য সুখের লাগি মত্ত অতিশয়।
বিভু গুণ গান করি কাল কর ক্ষয়॥
সামান্য পেটের তরে দেহ কর নাশ।
পরনারী হিবারে কর অভিলাষ ॥
সুখ সার এসংসার ভেবে তুমি মন।
দুঃখ জালে নিজে তুমি পড় সকর্বক্ষণ ॥
ত্যজ ত্যজ লোকালয় যাও যাও ধনে।
সেই স্থানে গিয়া তুমি তারে ভাব মনে ॥
বিনে দুঃখে তুমি সুখে রহিবে নিশ্চয়।
বিভূু গুণ গান করি কাল কর ক্ষয়॥
রাগিণী ঝিঝিট খাহ্বাজ
তাল জৎ।
কি হলো, কোথা গেল,
দুঃখ দিয়ে সে আমায়।
যার লাগি, দুখ ভাগি, কোথা সে আমার হায়।
সে আমার, আমি তার, তারে ভূলে থাকা দায়।
ভাবনায়, প্রাণ যায়, কেন দেহ সে জ্বালায়।
রাগিণী ঝিঝিট খাম্বাজ
তাল ভাগ ।
মনে করি, ভুলি তারে, ভোলা নাহি যায় রে।
শয়নে ্পনে হেরি, নয়নে তাহায় রে।
বিনা প্রাণ, মম প্রাণ, সদা বিদরায় রে।
কত কাদি, বিধি বাদী, হইল আমায় রে।
সে ধনে পড়িলে মনে, দুঃখ পায় পায় রে।
১৫৭৯
রাগিণী সিন্ধু
তাল আড়া ঠেকা।
এস এসে চন্দ্রানন, ভাবি সদা তোমারে ।
না হেরে বদন তব. দুখিত আছি অন্তরে ॥
তুমি মম প্রাণ ধন, বধিয়ে মম জিবন, কোথা
গেলে বাছাধন, দুঃখ দিয়ে আমারে।
রাগিণী বেহাগ
তাল কাওযালি
মন কেন তারে তুমি ভাবনা।
ভাবিলে যাহারে, যাবে ভবের ভাবনা ।
মিছা ভাবে ভাবী হোয়ে, পরেরে আপন
কোয়ে, অকারণ ওরে মন রোদন করোনা ॥
বাগিণী গাবা ভৈববি
তাল আডা ঠেকা।
মন কেন কর অস্পার বাসনা ।
দারা সুত পরিজন, কেহই নহে আপন,
ক্ষণে দেয় দরশন, জেনেও কি জাননা _
জাননা অন্তিমে কত-পাইবে যাতনা ।
রাগিণী ঝিঝিট খান্বাজ
তাল জৎ।
কি কারণ, জ্বালাতন, অহরহলাগি তার।
মায়া পাশে, অনায়াসে, বদ্ধরহ অনিবার।
নিরাকার, সবর্বসার, তারে মন কর সার।
সম্পূর্ণ।
(লেখক-পরাচিতি পাওয় যায়ানি)